নারী নির্যাতন কি? নারী নির্যাতনের ধরন আলোচনা কর

নারী নির্যাতন কি?

ভূমিকাঃ- সূদূর ল্যাটিন আমেরিকা কিংবা আফ্রিকা ইউরোপ কিংবা এশিয়া বিশ্বের সর্বত্র নারী নির্যাতন এক বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। নারী নির্যাতনের ঘটনাবলি যে মানবাধীকার লঙ্ঘনের সমতুল্য অপরাধ সে কথা আজ সর্বজনবিদিত।

নারী নির্যাতন কি? নারী নির্যাতনের ধরন আলোচনা কর

'Women rights and human rights' এ কথাটি আজও বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। অথচ লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে নারীর মানব অধিকার হরণের ঘটনাবলি দিন দিন বেড়েই চলেছে।বিশ্বে নারী নির্যাতনের সাথে সাথে বাংলাদেশেও নারী নির্যাতন বাড়ছে। বাংলাদেশে এ হার ৪৭%। দেশজুড়ে নারী নির্যাতনের এ ভয়াবহ পরিস্থিতে কোনো বিবেকবান মানুষই চিন্তিত না হয়ে পারে না। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে দেশে আইন আছে নতুন আইন তৈরী হচ্ছে, তা সত্ত্বেও নির্যাতনের হার থেমে নেই বা থামার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।

নারী নির্যাতনঃ ১৯৯৫ সালে জাতিসংঘ প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদনে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা নির্যাতনকে নিম্নরুপে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ''Gender violence is a violence against women that results in physical, mental, sexual coercion or arbitrary deprivation and violation of human rights.'' অর্থাৎ নারী নির্যাতন এমন একটি নিন্দনীয়  অপরাধমূলক কাজ, যার ফলে নারী দৌহিক, মানসিক ও যৌন হয়রানির শিকার হয় বা ক্ষতির সম্ভবনা থাকে। তাছাড়া এসব দুষ্কর্ম ঘটানোর হুমকি দেওয়া হয়। নানা রকম জোরজবরদস্তি করা, চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটানো ইত্যাদিও নির্যাতনের সংজ্ঞায় পড়ে।''

নারী নির্যাতন নির্মূল ঘোষণায় ১৯৯৩ সালে নির্যাতনকে  সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এভাবে- ''লিঙ্গভিত্তিক যে কোন ধরনের নির্যাতন, যার ফলে নারীর শারীরিক, মানসিক বা যৌন ক্ষতি হয় বা হতে পারে।যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত আছে জনজীবন বা ব্যক্তিগত জীবনে এ ধরনের কার্যক্রমে হুমকি দেওয়া দমনপীড়ন অথবা স্বেচ্ছাচারীভাবে স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করায় নারী নির্যাতন।''

নারী নির্যাতনের ধরনসমূহ

বর্তমান সমাজে নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। অঞ্চলভেদে নির্যাতনের ধরনের কিছুটা হেরফের হলেও প্রধান নির্যাতন কখনো বাইরে প্রকাশিত হয় না। যাইহোক বাংলাদেশে সংঘঠিত নারী ও কন্যাশিশুদের নির্যাতন নিপীড়ন ও শোষণের কয়েকটি ধরন নিম্নে তুলে ধরা হলো-

  • যৌন হয়রানি: এটি নির্যাতনের প্রধান হাতিয়ার।রাস্তাঘাট, কর্মস্থল কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীরা প্রায়ই যৌন হয়রানির শিকার হয়। তা হতে পারে অশালীন ইঙ্গিত, বাজে মন্তব্য, স্পর্শ কিংবা ভীতিকর দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে। এটি নারীর মানসিক শান্তি ও আত্মবিশ্বাসের ওপর সরাসরি আঘাত হানে
  • ধর্ষণ, গণধর্ষণ: ধর্ষণ নারী নির্যাতনের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ। অনেক ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা বিচার পায় না বা বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। ধর্ষণের শিকার হয়ে অনেকেই সামাজিকভাবে হেয় হয় এবং আত্মহত্যা পথ বেছে নেয়।
  • কন্যা শিশু ও নারী হত্যা: নারীকে বোঝা মনে করে অনেকে গর্ভেই কন্যাশিশুকে হত্যা করে বা জন্মের পর অবহেলা করে। পারিবারিক কলহ বা যৌতুকের জন্য অনেক নারীকে হত্যা করা হয়। 
  • যৌতুক: যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি। যৌতুকের কারণে নারী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন হন এমনকি ক্ষেত্রবিশেষ হত্যাও হন।
  • এসিড নিক্ষেপ: নারীর প্রতি প্রতিশোধ পরায়ণ মনোভাব থেকে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা চিরতরে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে।
  • নারী পাচার: নারীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে, মিথ্যা আশ্বাসে পাচার করা হয়।
  • কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী বা অন্যদের দ্বারা যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতন: অনেক নারী কর্মস্থলে সহকর্মী বা ঊর্ধ্বতনদের দ্বারা যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। এতে কর্মজীবনে বাধা সৃষ্টি হয় এবং তাদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে পড়ে।
  • পারিবারিক নির্যাতন: অনেক পরিবারেই নারীকে প্রাত্যহিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। স্বামী, শ্বশুরবাড়ির সদস্য, এমনকি নিজের পরিবারের লোকজনও অনেক সময় এর জন্য দায়ী।
উপসংহার: নারী নির্যাতন একটি জঘন্য সামাজিক অপরাধ। এটি কেবল নারীর নয়, পুরো সমাজ ও জাতির জন্য লজ্জার বিষয়। যদিও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বাংলাদেশসহ অনেক দেশে আইন রয়েছে, তবে প্রয়োগে ঘাটতি, সামাজিক সচেতনতার অভাব ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। নারী নির্যাতন রোধে প্রয়োজন পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টাসহ সর্বস্তরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই কেবল আমরা একটি নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ সমাজ গড়তে পারব।


No comments:

Post a Comment