অনুকল্পের প্রকারভেদ ও অনুকল্প যাচায়ের ধাপ সম্পর্কে লিখ

অনুকল্পের প্রকারভেদ ও অনুকল্প যাচায়ের ধাপ সম্পর্কে লিখ

অনুকল্পের প্রকারভেদ ও অনুকল্প যাচায়ের ধাপ সম্পর্কে লিখ

অথবা, অনুমিত সিদ্ধান্তের প্রকারভেদ সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

ভূমিকা: অনুমিত সিদ্ধান্ত বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকর্মে একটি অপরিহার্য হাতিয়ার। সামাজিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অনুকল্প বা অনুমিত সিদ্ধান্ত। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকর্মের বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনার ভিত্তিতেই অনুমিত সিদ্ধান্তের প্রকারভেদ সৃষ্টি হয়েছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় একজন গবেষককে সুনির্দিষ্ট সম্পর্কানুমান নির্ধারণে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

অনুকল্পের প্রকারভেদ ও অনুকল্প যাচায়ের ধাপ

অনুমিত সিদ্ধান্তের প্রকারভেদ: অনুমিত সিদ্ধান্ত বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। নিম্নে অনুমিত সিদ্ধান্তের কতিপয় প্রকারভেদ উল্লেখ করা হলো: অনুকল্প প্রধানত ২ প্রকার। যথা- ১. বর্ণনামূলক অনুকল্প ও ২. কার্যকারণমূলক অনুকল্প।

(ক) পরীক্ষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভিত্তিতে অনুমিত সিদ্ধান্ত ২ প্রকার হতে পারে। যেমন: ১. আরোহমূলক ও ২. অবরোহমূলক।

(খ) ব্যবহার উপযোগিতার দিক থেকে অনুমিত সিদ্ধান্ত হতে পারে ২ প্রকার। যেমন: ১. পরীক্ষণযোগ্য ও ২. অপরীক্ষণযোগ্য।

(গ) পরিসংখ্যানিকভাবে অনুমিত সিদ্ধান্ত যাচাই করা যায়। তাই পরিসংখ্যানিকভাবে যাচাইয়ের ভিত্তিতে অনুমিত সিদ্ধান্ত হতে পারে ২ প্রকার। যেমন- ১. নাস্তি অনুমিত সিদ্ধান্ত ও ২. বিকল্প অনুমিত সিদ্ধান্ত।

১. নাস্তি অনুমিত সিদ্ধান্ত (Null hypothesis): যে পরিসংখ্যানিক অনুমিত সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য অসত্যতা যাচাই করা হয় তাকে নাস্তি অনুমিত সিদ্ধান্ত বলা হয়।

২. বিকল্প অনুমিত সিদ্ধান্ত (Alternative hypothesis): যে অনুমিত সিদ্ধান্তের বিপক্ষে নাস্তি অনুমিত সিদ্ধান্ত যাচাই করতে হয় তাকে বিকল্প অনুমিত সিদ্ধান্ত বা অনুকল্প বলা হয়। নাস্তি অনুকল্প Ho এবং বিকল্প অনুমিত সিদ্ধান্ত কে Ha দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। নিম্নে নাস্তি অনুমিত সিদ্ধান্তের উদাহরণ দেয়া হলো:

Ho: অফিসে তুলনামূলক ভালো দায়িত্ব পালনের সাথে লিঙ্গের কোন প্রভাব নেই।

Ha: অফিসে তুলনামূলক ভালো দায়িত্ব পালনের সাথে লিঙ্গের প্রভাব আছে।

Ho: শপিং সেন্টারে দরকষাকষিতে পুরুষ ও মহিলা ক্রেতাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই।

Ha: মহিলা ক্রেতারা পুরুষ ক্রেতাদের তুলনায় শপিং সেন্টারে বেশি দরকষাকষি করে।

উপসংহার: উপরোক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদান হিসেবে অনুকল্পের গুরুত্ব সামাজিক গবেষণায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। অনুকল্পের প্রকারভেদ হিসাবে নাস্তি অনুকল্প বিকল্প অনুকল্পের গুরুত্ব ও অপরিসীম।

অনুকল্প যাচায়ের ধাপসমূহ

অনুকল্প যাচায়ের ধাপ: সাধারণত অনুকল্প যাচাই হলো নমুনার ভিত্তিতে সমগ্রকের পরামান এর যথার্থ যাচাই এর একটি প্রক্রিয়া। মূলত এ অনুকল্পের প্রণয়নের উপরই কোন গবেষণার সাফল্য ও ব্যর্থতা বহুলাংশে নির্ভর করে। এজন্য পূর্বানুমান প্রণয়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। আর তাই গবেষকগণ যখন অনুকল্প বা হাইপোথিসিস প্রণয়ন করেন তখন তা যথার্থরূপে হয়েছে কি না যাচাই করেন। নিম্নে সংক্ষেপে অনুকল্প যাচাইয়ের ধাপসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. সঠিক অনুকল্প প্রণয়ন অনুকল্প প্রণয়নের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে একটি যথার্থ বা সঠিক অনুকল্প প্রণয়ন, যা পরীক্ষা করা যায়। এক্ষেত্রে দুটি ভিন্নধর্মী অনুকল্প প্রণয়ন করা হয়। যথা: (i) নাস্তি অনুকল্প এবং (ii) বিকল্প অনুকল্প ।

২. উপাত্ত সংগ্রহ ও ব্যাখ্যা: নাস্তি কল্পনা গ্রহণ অথবা বাতিলের জন্য উপাত্ত সংগ্রহ করা প্রয়োজন। অনুকল্প যাচাইয়ের জন্য উপাত্ত সংগ্রহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সাধারণত বিভিন্ন নমুনায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। এখানে অনুমান করে নেয়া হয়েছে, উপাত্তগুলো আমাদের আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনুকল্প যাচাই পদ্ধতিতে দৈব নমুনাগুলো পরিমিত বিন্যাস থেকে চয়ন করা হয় বলে অনুমান করা হয়।

৩. সুযোগমতো যথার্থতা যাচাই পর্যায় সৃষ্টি: সুযোগমতো যথার্থতা যাচাই পর্যায় সৃষ্টি অনুকল্প যাচাই পদ্ধতির তৃতীয় ধাপ। গৃহীত নাস্তি অনুকল্পটি গ্রহণ বা বাতিল হবে কি না তা নির্ভর করে সংশয়ের মাত্রা বা যথার্থ সীমার উপর সাধারণ ৫% বা ১% সংশয় মাত্রা প্রয়োগ করে গবেষণা করা হয়ে থাকে। যখন আমরা ৫% সংশয় মাত্রা নিয়ে পরীক্ষা করব তখন ১০০ এর মধ্যে ৫টি দৈব ঘটনা অনুষ্ঠিত হবে। আমরা কল্পনাকে বাতিল বলে গণ করতে পারি এবং যখন এটিকে গ্রহণ করা হবে তখন আমর শতকরা ৯৫ ভাগ নিশ্চিত হবে যে, আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমর্থ হয়েছিল। যখন ৫% সংশায় মাত্রার নাস্তি কল্পনা বাতিল বলে গণ্য হবে, তখন ফলাফলকে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত করা যাবে।

৪. পছন্দমতো বিচারযোগ্য পরিসংখ্যানিক নির্ণয়: অনুকায় যাচাইয়ের এ পর্যায়ে একটি সুবিধা মাত্রা পরীক্ষাযোগ্য পরিসংখ্যান নির্ণয় করা হয় এবং তার বিন্যাস কার্যকরী করা হয়। এ সম্পর্কে পরিসংখ্যানে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে।

৫. সংশয় এলাকা নির্ধারণ: যাচাই নমুনা মানের ভিত্তিতে নাস্তি কল্পনা বাতিল হলে এটি যেসব মানের জন্য বাতিল হয় তাদের সমন্বয়ে গঠিত অঞ্চলকে সংশয়ের এলাকা বলে। সাধারণত যখন কেউ ৫% সংশয় মাত্রা প্রয়োগ করে, তখন মনে করতে হবে যে, সে ব্যক্তি ৫% ঘটনাকে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক এবং নাস্তি কল্পনাকে বাতিল করতে ইচ্ছুক।

৬. হিসাব নিকাশ করা অনুকল্প যাচায়ের ষষ্ঠ ধাপ হচ্ছে সমুদয় কাজের হিসাবনিকাশ সন্ধান করা। এখানে দৈব চয়নে এ সংখ্যক নমুনা আকারের বিভিন্ন ধরনের হিসাব সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে এসব হিসাব নিকাশ প্রয়োজন হয় পরীক্ষিত বিষয়ের জন্য। তারপর লক্ষ্য করতে হয় নমুনা ফলাফল নির্ধারিত। বিচার সীমার মধ্যে পতিত হয়েছে কি না

৭. সিদ্ধান্ত গ্রহণ: অনুকল্প যাচায়ের সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এক্ষেত্রে যে কল্পনাকে আমরা পরীক্ষা করব তা যদি সংশয়ে মাত্রায় পর্যবেক্ষিত ফলাফলের সম্ভাবনা শতকরা ৫ ভাগের কম হয়, তখন আমরা নাস্তি কল্পনাকে বাতিল বলে গণ্য করব। তখন নমুনা পরিসংখ্যান এবং কল্পিত পরিমাণের মধ্যে পার্থক্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে স্বীকৃতি হবে। অপরপক্ষে, যদি পরীক্ষায় নির্ণেয় পরিসংখ্যান অবাতিল সীমায় পতিত হয়, তখন নাস্তি কল্পনা গ্রহণযোগ্য হবে। এসময় নমুনা ফলাফল এবং কল্পিত পরিমাণের মধ্যে পার্থক্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে গণ্য হবে।

উপসংহার: আলোচনা শেষে বলা যায় যে, কোন গবেষণাকার্য সম্পাদনের জন্য নির্বাচিত এক বা একাধিক চলকের মধ্যে অনুমিত এবং যাচাইযোগ্য সম্পর্ককে অনুকল্প বলে। বস্তুত কোন গবেষণার সাফল্য ও ব্যর্থতা অনেকাংশেই নির্ভর করে যথার্থ পূর্বানুমান প্রণয়নের উপর। একটি সফল অনুকল্প যাচায়ের উল্লিখিত সাতটি স্তর বা ধাপ বিদ্যমান। যা সামাজিক গবেষণায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post