বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদানসমূহ আলোচনা কর

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদানসমূহ আলোচনা কর

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মৈলিক উপাদান বা ধারণাসমূহ

ভূমিকাঃ বিজ্ঞান হচ্ছে একটি নিয়ম-নিষ্ঠ জ্ঞানের সমষ্টি। বিজ্ঞান একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। তাই সাধারণ মানুষ সকল বিষয় জানতে আগ্রহী আর বিজ্ঞান বিশেষ বিষয় জানাতে আগ্রহী। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নিয়মতান্ত্রিক এবং সূত্র বাধ্য। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান লাভের জন্য বিশেষ পদ্ধতি ও বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।  বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যুক্তি হলো প্রধান বিষয় এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় জ্ঞানের ব্যাপ্তি প্রতিনিয়তই সম্প্রসারিত হচ্ছে।  তবে শুধুমাত্র জ্ঞান আহরণই বিজ্ঞানের শেষ কথা নয়। বিজ্ঞান এক দিকে জ্ঞান আহরণ করে অন্যদিকে আহরিত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে চাই।  বিশ্ব চরাচরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে।এ সকল ঘটনা আমাদের মনের উপর প্রভাব বিস্তার করে আবার কত  গুলো পারেনা। যে সকল ঘটনা আমাদের মনের উপর প্রভাব বিস্তার করে সেগুলি আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে চাই। এই জানার ক্ষেত্রে তথা অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আমাদের সহায়তা করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। কোন ঘটনা বা ঘটনাবলী প্রেক্ষিত অবস্থা বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কার করাই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মূল লক্ষ্য। বিজ্ঞানের এই প্রয়াস একটি প্রণালী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে । এই প্রক্রিয়া কতিপয় উপাদানের মাধ্যমে কার্যকরী হয়ে থাকে। 

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদানসমূহ আলোচনা কর


বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদান 

নিম্নে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদান বা মৌলিক ধারণা গুলো দেওয়া হল। 

১। ঘটনাঃ ঘটনা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রথম ও প্রধান আলোচ্য বিষয়। ঘটনা বস্তুগত বা দৈহিক, আবেগীয়, সামাজিক বা পরিবেশগত ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে হতে পারে। একটি ঘটনা বিভিন্ন মানুষের কাছে তাদের নিজেদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ও বৈশিষ্ট্যের পার্থক্যের কারণে বিভিন্নভাবে প্রতিভাত হতে পারে।

P.V Young ঘটনাকে তথ্যের অন্তর্ভুক্ত করে বলেছেন তথ্য হল  Facts, figures etc. Known or available information.

আমেরিকার Couings Dictionary তে উল্লেখ করা হয় ঘটনা হলো What is really happened.

Goode and hatt এর মতে ঘটনা হচ্ছে দুটি প্রত্যয় বা ধারণার মধ্যকার সম্পর্ক সম্বন্ধে  একটি বিবৃতি। 

২। প্রত্যয়ঃ ধারণা বা প্রত্যয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির  একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক উপাদান। 

K.D. Bailey  এর মতে সাধারণ কথাই ধারণা হলো একটি মানসিক অনুভূতি বা প্রত্যক্ষণ একে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা অসম্ভব। যেমন মেধা, ভালো, খারাপ, পছন্দ ইত্যাদি। তবে ধারণাকে বস্তুজগতের যেসব উপাদানকে ইঙ্গিত করে তা কোন কোন ক্ষেত্রে আবার পর্যবেক্ষণযোগ্য জীববন্তু, গাড়ি ইত্যাদি।

৩।অনুকল্পঃ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির একটি অন্যতম হাতিয়ার হলো অনুকল্প।একে অনুসন্ধান  কাজের দিকনির্দেশক বলা হয়ে থাকে। অনুসন্ধান কাজে গবেষক কে কি দেখাতে হবে তা অনুকল্প বলে দেয়। 

Goode and hatt এর মতে অনুকল্প হল এমন একটি প্রস্তাবনা যার যথার্থতা নির্ধারণের জন্য পরীক্ষাধীন আনা হয়। আর এটি সাধারণ উপলব্ধির পক্ষে ও বিপক্ষে উভয়দিকেই যেতে পারে। 

৪। অনুমানঃ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনুকল্প গঠন যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তেমনি সম্ভাব্য কিছু বিষয়কে অনুমান হিসেবে ধরে নেওয়া অনুসন্ধান কাজের জন্য যথেষ্ট সহায়তা বলে বিবেচিত। একই বিষয়ক সম্পর্কিত কিছু কিছু দিক সংশ্লিষ্ট গবেষণার সত্য বলে ধরে নেওয়ায় হল অনুমান। অনুমানের এ সত্যতা কেবল ওই অনুসন্ধান কাজের ক্ষেত্রে ধারণ করা হয়।

Lillian Ripple বলেন একটি নির্দিষ্ট অনুসন্ধান কর্মে গৃহীত কোন প্রস্তাবনাকে হুবহু গ্রহণ করাই অনুমান। 

৫। তত্ত্বঃ বিজ্ঞানের অস্তিত্ব যেমন তার অনুসৃত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপর নির্ভর করে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাফল্য ও তেমনি তার উদ্ভাবিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের উপর নির্ভরশীল। বর্তমান কালের সমাজ গবেষকগণ মনে করেন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাফল্যও তার উদ্ভাবিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের উপর নির্ভরশীল। 

G. R. Adams and J. D. Schavene Veldt এর মতে তথ্য হচ্ছে ঘটনার ব্যাখ্যা, কোন কিছু কেন ঘটে তার যৌতিক ভিত্তি,  পর্যবেক্ষিত বিষয়ের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

৬। চলকঃ সাধারণ কথায় যা পরিবর্তিত হয় তাই চলক। মূলত চলক এমন এক ধরনের গুণ, বৈশিষ্ট্য বা অবস্থা যা একই পরিপেক্ষিতে ঘটনা পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।চলকের মূল্যায়ন পরিবর্তনশীল। 

B.F Anderson এর মতে চলক হলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন গুণের সমাবেশ। 

Jary and jary 1991 গুণগত বা পরিমাণগত যে কোন পরিবর্তনের সূচকে চলক বলা হয়। 

চলক বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। প্রকৃতিগত দিক হতে ২ প্রকার গুণবাচক ও সংখ্যাবাচক।

সংখ্যাবচক গতিপথের নিরিখে বিচ্ছিন্ন ও অবিচ্ছিন্ন।

পদ্ধতিগত পদ্ধতি সম্পর্কে দিক হতে ৩ প্রকার। যথা স্বাধীন, নির্ভরশীল ও নিয়মতান্ত্রিক।

উপসংহারঃ উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে উক্ত উপাদানগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিদ্যমান।  এ উপাদান সমূহের সমন্বয়ে গঠিত হয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।সামাজিক  গবেষণায় এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারের কোন বিকল্প  নেই। কেননা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সামাজিক গবেষণা চালিকাশক্তি ও হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয় এবং গবেষণায় দিকনির্দেশনা প্রদান করে। সামাজিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদান গুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post