📚প্রশ্নঃ বিশ্বায়ন কি?
অথবা, বিশ্বায়ন বলতে কি বোঝায়?
অথবা, বিশ্বায়নের সংজ্ঞা দাও?
বিশ্বায়ন শব্দটি Globalization থেকে এসেছে। বিশ্ববাসীর কাছে আজ বহুল ব্যবহৃত শব্দ বিশ্বকরণ বা বিশ্বায়ন। সমাজ, সংস্কৃতি অর্থনীতি রাজনীতি সকল কিছুই আজ বিশ্বায়নের আলোচিত বিষয়। বর্তমানে বিশ্বায়নের বিকাশ সাধিত হচ্ছে পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে, তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। বিশ্বায়ন ২১ শতাব্দির গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।
বিশ্বায়নঃ বিশ্বায়ন শব্দটি ইংরেজি Globalization থেকে এসেছে, যার আভিধানিক অর্থ হলো পৃথিবী বা বিশ্ব। ১৫৫১ সালে প্রথম Globe শব্দটি ব্যবহৃত হয়, এবং Global শব্দটির ব্যবহার শুরু হয় ১৭৭৬ সালে। বিশ্বায়ন পারিভাষিকভাবে বোঝায়: একটি দেশের সম্পদ, পুঁজি, প্রযুক্তি, এবং সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোকে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা। এটি একটি অবাধ বৈশ্বিক প্রক্রিয়া, যা আজকের সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং রাজনীতির অঙ্গনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বর্তমান শতাব্দির সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় বিশ্বায়ণ । বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে বিশ্বায়নের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা নিম্নরুপ-
মার্শাল ম্যাকরুহানের মতে-“বিশ্বায়ন ধারণাটি মূলত গ্লোবাল ভিলেজের ধারণা থেকে উৎপত্তি হয়েছে।”
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বর্তমান শতাব্দির সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় বিশ্বায়ণ । বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে বিশ্বায়নের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা নিম্নরুপ-
মার্শাল ম্যাকরুহানের মতে-“বিশ্বায়ন ধারণাটি মূলত গ্লোবাল ভিলেজের ধারণা থেকে উৎপত্তি হয়েছে।”
পরিশেষে বলা যায় যে বিশ্বায়ন হচ্ছে সামগ্রিক বিশ্বের এমন একটি আর্থসামাজিক ব্যবসায়িক কর্মসূচি যার মাধ্যমে অভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
বিশ্বায়নের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব
বিশ্বায়ন পৃথিবীকে এক অভিন্ন গ্রামে পরিণত করছে, যেখানে অর্থনীতি, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, এবং বাণিজ্য একে অপরের সাথে যুক্ত। আসুন দেখি, এর কিছু প্রধান গুরুত্ব:
১. তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ:
বিশ্বায়নের ফলে তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ সম্ভব হয়েছে, যার মাধ্যমে বিশ্বের প্রতিটি কোণে তথ্য দ্রুত পৌঁছাতে পারে। বিভিন্ন দেশ এখন নিজেদের শিল্প, ব্যবসা, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দ্রুত শেয়ার করতে পারছে, যার ফলে বৈশ্বিক সহযোগিতা ও বৃদ্ধি সম্ভব হচ্ছে।
২. মুক্তবাজার অর্থনীতি:
বিশ্বায়ন বিশ্বের বাজারে সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এটি মুক্তবাজার অর্থনীতি তৈরি করেছে, যেখানে দেশগুলো তাদের পণ্য ও সেবা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর বাজারে প্রবেশ করতে পারে। এই প্রবাহ অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান তৈরি করতে সহায়তা করে।
৩. বিশ্বে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার পরিবর্তন:
বিশ্বায়নের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তিত হয়েছে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো একই স্রোতে চলছে, ফলে নতুন নতুন পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে যা সকল দেশের উন্নতি নিশ্চিত করছে।
৪. মূলধন ও পুঁজির অবাধ সরবরাহ:
বিশ্বায়নের ফলে মূলধন এবং পুঁজি বিশ্বব্যাপী সরবরাহ করা হচ্ছে। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো এখন সহজেই বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারছে, যার মাধ্যমে তাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে।
৫. বিশ্ব অর্থনীতির রূপরেখা পরিবর্তন:
বিশ্বায়নের মাধ্যমে বিশ্বের অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তিত হচ্ছে। নতুন বাজার, নতুন পণ্য এবং সেবা প্রদানের মাধ্যমে অর্থনীতি আরো গতিশীল হচ্ছে।
৬. বাজার সম্প্রসারণ: বিশ্বায়নের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাজার সম্প্রসারণ হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর পণ্য এখন উন্নত দেশের বাজারে প্রবেশ করতে সক্ষম, যা ব্যবসা বৃদ্ধি এবং দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করছে।
৭. সেনাবাহিনীর গুণগত মানের উন্নতি:
বিশ্বায়নের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর গুণগত মানের উন্নতি হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সহযোগিতা, অস্ত্রের আমদানি, এবং নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বাড়িয়েছে।
বিশ্বায়ন এবং দেশের উন্নয়ন:
বিশ্বায়ন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, এটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে ব্যবসায়িক এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান, একে অপরের উন্নয়ন এবং শান্তির প্রচার করছে। বিশ্বায়ন একটি দেশের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে সক্ষম।
বিশ্বায়ন: উন্নয়ন ও চ্যালেঞ্জ
বিশ্বায়ন শুধু সুবিধা নিয়ে আসেনি, কিছু চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করেছে। অর্থনৈতিক অসমতা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ক্ষতি, এবং বিশ্ব পরিবেশের অবনতির মতো বিষয়গুলো বিশ্বায়নের নেতিবাচক দিক। তবে, এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশগুলো যৌথভাবে কাজ করছে।
উপসংহার:
বিশ্বায়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যা বিশ্বের প্রতিটি দেশকে একে অপরের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করেছে। এটি প্রতিটি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং একটি সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে পৃথিবীকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।