সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

📚 প্রশ্নঃ সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর। 

অথবা, সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বের প্রকৃতি আলোচনা কর

অথবা, সমাজতত্ত্বের বৈশিষ্ট্য লেখ।

(সমাজবিজ্ঞান মাস্টার্স-ফাইনাল)

মানুষ সামাজিক জীব । আর  এ সমাজবদ্ধ জীবনের ইাতহাস খুবই প্রধান। বিভিন্ন চিন্তাবিদ এবং দার্শনিক এই সমাজব্যবস্থায় ধারাবাহিক জীবনের উতিহাস ব্যাখ্যা করেছেন। বিভিন্ন চিন্তা যখন তাদের মাথায় আসে এবং তা যদি সমাজকে ঘিরে আবর্তিত হয় তখন তাই হয়ে উঠে সমাজতত্ত্ব বা SOCIAL THEORY এ তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে তত্ত্বের উৎপত্তি ও ক্রবিকাশকে বিকশিত করে।
সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর


সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব এর বৈশিষ্ট্যঃ সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বের বিভিন্ন সংজ্ঞা আলোচনার কারনে এ তত্ত্বে নিম্নলিখিত দিকসমূহের প্রতিফলন দেখা যায়-
১। সুনির্দিষ্ট প্রত্যয় কেন্দ্রিকতাঃ সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব আলোচনার ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি  সুনির্দিষ্ট প্রত্যয় থাকবে। এ প্রত্যয় ধরে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কেননা সুনির্দিষ্ট প্রত্যয় বা লক্ষ্য ছাড়া কখনও কোন কাজের বা গবেষণার সঠিক বিশ্লেষণ করা সম্ভব না। যার কারণে আমাদের কোন কিছু নিয়ে কাজ করতে গেলে অবশ্যই আগে একটি সুনির্দিষ্ট প্রত্যয় স্থাপন করে নিতে হবে।
২। প্রতীকী কাঠামোর বিদ্যমানতাঃ প্রতিটি তত্ত্বেরই কিছু না কিছু প্রতিকী কাঠামো থাকে। সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বও এর ব্যতিক্রম কিছু না। সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব এর ও কিছু প্রতীকী কাঠামোর বিদ্যমান যার মাধ্যমে তাত্ত্বিকরা গবেষণার বিভিন্ন বিষয় নির্ধারণ করে। প্রতীকী কাঠামোর মাধ্যমে কোন সমাজ বা দেশ সম্পর্কে সঠিক তত্ত্ব বের করে আনা সম্ভব এবং সে অনুযায়ী গবেষণার কায্যসম্পাদন করা যায়।
৩। পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত অনুমানসমূহঃ প্রতিটি তত্ত্ব নির্মানের জন্য কিছু অনুমান করা হয়। আর যেই অনুমানগুলি সবসময় একে অপরের সাথে  সম্পর্কযুক্ত থাকে অর্থাৎ কোন বিষয় বা তত্ত্বে জন্য কোন অনুমান দরকার হবে না আর সেই অনুমানগুলি একটির সাথে আরেকটি Interconnection থাকবে।
৪। সামাজিক বাস্তবতার নির্দেশকঃ সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব সমুহ অধিকাংশ সময়ে বাস্তবতার নিরিক্ষে তৈরী করা হয়ে থাকে। সমাজের বাস্তবতা যেমন- অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনীতি প্রভূতি বিষয়গুলি বিভিন্ন তত্ত্বের আলোচনায় উঠে আসে । অর্থাৎ তত্ত্বের বাস্তবতা অবশ্যই সমাজকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে।
৫। শর্তসাপেক্ষতাঃ কোন বিষয়গুলি সমাজতাত্ত্বিক আলোচনার অন্তর্ভূক্ত থাকবে কোনগুলো থাকবে না সেগুলো নির্ধারণের জন্য প্রত্যক তত্ত্বের উপরই কিছু শর্তসাপেক্ষতা সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বের আলোচনার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৬। সংশোধনযোগ্যঃ কোন তত্ত্বই ভূলত্রুটির উদ্ধে নয়, কিছু ত্রুটি সবসময় সংশোধনযোগ্য হয় আবার কিছু হয় না। সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বসমূহও এর ব্যতিক্রম । তবে এর একটি সুবিধা হচ্ছে সংশোধনযোগ্যতা। কোনো তত্ত্ব চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন করার আগে সেগুলোর সংশোধনের জন্য কিছু সময় দেয়া হয় বা পূর্নবিবেচনার সুযোগ দেওয়া হয় যা সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বে আলোচনার ক্ষেত্রে খুবই উপকারী ।
৭। মূল্যায়নযোগ্যতাঃ পারসন্স এর মতে- প্রতিটি তত্ত্বেই কিছু না কিছু কোয়ালিটি থাকে যার মাধ্যমে ঐ তত্ত্বকে মূল্যায়ন করা হয়। সুতরাং মূল্যায়নযোগ্যতাও সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক । কারণ কোন তত্ত্বের যদি মূল্যয়ন যোগ্যতা না থাকে তাহলে তা তত্ত্ব বলে গণ্য হবে না।
৮। সুস্পষ্টতা ও সুনির্দিষ্টতাঃ সুস্পষ্টতা ও সুনির্দিষ্টতা সমাজ তাত্ত্বি তত্ত্বের আর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। কেননা কোন তত্ত্ব যদি সুস্পষ্ট না হয় তাহলে সেটা সহজে অনুধাবন করা সম্ভব হবে না তেমনি তত্ত্ব যদি সুনির্দিষ্ট না হয় তবে তার উপর সঠিক গবেষণা বা বিশ্লেষণ করা যাবে না।ফলে তত্ত্বটি অসম্পূর্ণই থেকে যাবে।
৯। ভবিষ্যৎ কাঠামো ব্যক্তঃ পারসন্সের মতে- সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বসমূহ ভবিষ্যৎ কাঠামোকে ব্যক্ত করে।কেননা একটি তত্ত্বের মধ্যে যেমন, অতীত, বর্তমান নিয়ে আলোচনা করা হয় তেমনি তাতে ভবিষ্রৎ কাঠামোও ব্যক্ত থাকে। এই তত্ত্বব িবলে দেই ভবিষ্যৎ এ কোন গবেষণার ফলাফল কেমন হবে।
১০। প্রত্যয়গত কাঠামোঃ পারসন্সের সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বসমূহে প্রত্যয়গত কাঠামো বিদ্যমান থাকে। অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে মানুষ যখন কোন প্রত্যয় নিয়ে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন তার পূর্বে একটি প্রত্যয়গত কাঠামো তৈরী করে। সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব এর আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো প্রত্যয়গত কাঠামোর অবস্থান।
১১। বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্যভিত্তিকঃ সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব সাধারণত বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্যর ভিত্তিতে বেশি ব্যাখ্যা করা হয়। দিন দিন জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার সাথে সাথে সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বসমূহের উৎকর্ষতাও সাধিত হয়। কারণ বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ছাড়া কোন তত্ত্বই সঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায় না।
১২। জ্ঞাত সত্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণঃ সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো জ্ঞাত সত্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ।  অর্থাৎ এ তত্ত্ব রচনার ভিত্তি হলো সত্য জ্ঞান ও মানুষের বুদ্ধিভিত্তিক আলোচনা। কেননা কোন তত্ত্ব রচনারজন্য অবশ্যই পূর্ব কিছু ধারণা থাকার প্রয়োজন হয়। কেননা একবারে শূন্য মাথায় কোন সঠিক তত্ত্ব নির্মাণ করা সম্ভব হয়না ।
সুতরাং বলা যায় যে তত্ত্ব এক অপরের সাথে সম্পর্কিত এবং সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব এর নির্দিষ্ট কিছু কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য  বিদ্যমান।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post