বাংলাদেশে নারী শিক্ষার গুরুত্ব আলোচনা কর

বাংলাদেশে নারী শিক্ষার গুরুত্ব আলোচনা কর

ভূমিকাঃনারী শিক্ষা ব্যতীত সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। বেগম রোকেয়া নারীকে একটি গাড়ির চাকার সাথে তুলনা করেছেন। একটি গাড়ি একটি চাকা ছাড়া যেমন সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না তেমনি একটি জাতি নারী শিক্ষা ছাড়া উন্নতি করতে পারে না। তাই তো নেপোলিয়ান বলেছেন- আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও; আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি দেব।
বাংলাদেশে নারী শিক্ষার গুরুত্ব আলোচনা কর।


বাংলাদেশে নারী শিক্ষার গুরুত্ব:

সামগ্রিক জাতির কল্যাণের জন্য নারী শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। নিম্নে নারী শিক্ষার গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো।

১। শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর প্রভাব

একজন সুশিক্ষিত মা পারে তার সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে। নিজ আদর্শে গড়ে তুলতে পারেন। কারণ ছেলে মেয়েদের উপর মায়ের প্রভাবই বেশি পড়ে। ছোটবেলা থেকেই সন্তান মায়ের কাছ থেকে তারা আচার আচরণ, আদব-কায়দা ইত্যাদি শিখে থাকে। শিক্ষা বিস্তারে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

২। স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে

স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাচীনকালে নারীরা সবকিছুর জন্য তাদের স্বামীর উপর নির্ভরশীল ছিল। তারা ছিল অবহেলিত ও নির্যাতিত। গৃহের মধ্যই তাদের কার্যাদি সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু আজ নারীরা শিক্ষিত হবার কারণে শিক্ষক, ডাক্তার, পুলিশ, বিমানচালক হচ্ছে। তাই বাংলাদেশে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

৩। গৃহস্থলির কাজে নারী

গৃহস্থলির কাজের দিকে খেয়াল করলেও দেখা যায় নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষিতা নারী পুত্র-কন্যাদের অসুখ-বিসুখে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সেবা ও সংসারের প্রাত্যহিক আয়-ব্যায়ের হিসাব নিকাশ করতে পারে অশিক্ষিত নারীরা সেভাবে পারে না।

৪। দেশ গঠনে নারী

অতীতে দেশ গঠনে নারীদের যথেষ্ট ভূমিকা ছিল।বর্তমানেও নারীরা দেশ গঠনে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যতটি আন্দোলন হয়েছে প্রত্যেকটিতে নারীদের কিছু না কিছু অবদান রয়েছে। আর এ অবদান রাখছে শুধু শিক্ষিত নারীরাই।দেশ গঠনে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

৫। কুসংস্কার দূরীকরণে

সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কার দূরীকরণে শিক্ষিত নারীর ভূমিকা পালন করে। আজও সমাজে কুসংস্কার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এসব কুসংস্কার জাতির জীবনে উন্নয়নে বাধা হয়ে থাকে।নারী শিক্ষার মাধ্যমে এসব কুসংস্কার দূরীকরণ সম্ভব।

৬। আত্মশক্তি অর্জন

নারীরা মানসিকভাবে দুর্বল। কোন কাজে সিদ্ধান্ত নিতে ইতস্ততবোধ করে। নারী শিক্ষা নারীদের আত্মশক্তি অর্জনে সহায়তা করে। আত্মশক্তি অর্জন করে নারীরা সমাজে উন্নয়নের কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে।

৭। স্বাস্থ্য সচেতন

নারী শিক্ষা নারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। একজন আদর্শ নারী হিসেবে গড়ে উঠতে হলে নারীদের কিভাবে চলতে হবে কি করতে হবে তা নারীরা শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করতে পারে। নারীদের স্বাস্ব্যের উন্নয়ন সম্ভব হলে স্বাস্থ্যবান সন্তান জন্মদান সম্ভব।

৮। নেতৃত্ব প্রদান

শিক্ষার প্রভাবে নারীরা আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে।নারীরা বর্তমনে পরিবার থেকে শুরু করে দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদান করছে। বাংলাদেশের দিকে তাকালে দেখা যায় নারীরা আজ দেশের সরকারি বিভাগে উচ্চ পদস্থ স্থানে কর্মরত আছে এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রীও আজ নারী।

৯। মনোভাব পরিবর্তন

আদিম যুগে নারীরা পুরুষের উপর নির্ভরশীল ছিল। পরিবারের কোন কাজে নারীদের সিদ্ধান্তের মূল্যায়ন করা হতো না। বর্তমানে নারী শিক্ষার প্রভাবে নারীদের মনোভাব পরিবর্তিত হচ্ছে। নারীরা ইতিবাচক মনোভাবের দ্বারা সমাজের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করছে।

১০। স্বামীর সেবা

একজন নারী তার স্বামীকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। একজন শিক্ষিত নারী স্বামীর কথা বুঝতে পারে। স্বামীর সেবা করতে পারে। চাকরি করার মাধ্যমে স্বামীর আর্থিক উন্নয়নে সহায়তা করে। স্বামীর কাজে সহায়তা করতে পারে।
মানবসমাজ মাত্রই একটি মৌলিক প্রক্রিয়া হলো শিক্ষা। শিক্ষা হলো এক ধরনের বিশেষ সংস্কার সাধন। শিক্ষা মানে বিরামহীন প্রক্রিয়া। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর  থেকেই এ প্রক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটে।এ প্রক্রিয়া অমৃত্যু অব্যাহত থাকে। মানব সমাজের উন্নয়নে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। নারী শিক্ষা জাতিকে উন্নতির চরম শিখরে পৌছাতে পারে। তাই বাংলাদেশে নারী শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। 

No comments:

Post a Comment