পুজিঁবাদ কী? পুজিঁবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ

প্রশ্নঃ পুজিঁবাদ কী? পুজিঁবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু রয়েছে । বিশ্বে দুই ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়। যথা- সমাজতন্ত্র ও পুজিঁবাদ। মার্কসীয় মতে পশ্চিম ইউরোপে সামন্তবাদের অবসানের পর পুজিঁবাদের বিকাশ ঘটে। সমাজবিজ্ঞানী ও সামাজিক ঐতিহাসিকগণ পুজিঁবাদের সংজ্ঞা, বিকাশ সম্পর্কে যেসব মতবাদ দিয়েছেন সেগুলোর মধ্য মতভেদ আছে। পুজিঁবাদ হল এক বিশেষ ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। তবে সাধারণভাবে বলা যায়, পশ্চিম ইউরোপে বিশেষ করে ইংল্যান্ডে ১৮ শতকের শেষ ভাগ থেকে ১৯ শতকের মধ্যে ভাগ সময়কে পুজিঁবাদী আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার স্বর্ণযুগ বলা হয়।

পুজিঁবাদ বা ধনতন্ত্রঃ পুজিঁবাদ হলো এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যা ব্যক্তিগত মালিকানা, উৎপাদনের উপায়ের নিয়ন্ত্রণ এবং লাভের জন্য তাদের পরিচালনার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। অন্যভাবে বলা যায়, পুজিঁবাদ বলতে বোঝায় এমন এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে মুনাফা তৈরীর লক্ষ্যে  ব্যবসা কারখানা এবং উৎপাদনের উপকরণসমুহের উপর ব্যক্তি মালিকানার নিয়ন্ত্রণ। পুঁজিবাদ ব্যভস্থায় সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ মালিকদের হাতে থাকে এতে রাষ্ট্রের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। পুজিঁবাদকে মুক্ত বাজার অর্থনীতি হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।
সমাজবিজ্ঞানী সুমপিটার বলেন- “পুজিঁবাদ বা ধনতন্ত্র হচ্ছে একটি মূল্যবোধের প্রণালী জীবনের প্রতি একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি এবং একটি সভ্যতা। তবে সে সভ্যতা অসাম্য ও পারিবারিক সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক।”
ম্যাক্স ওয়েবারের ধারণায়- “পুজিঁবাদই হচ্ছে পুজিঁবাদী সমাজ ব্যবস্থার আদর্শ নমুনা।”
পুজিঁবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহঃ যাইহোক বিভিন্ন দিক বিচার বিশ্লেষণ করে পুজিঁবাদ ব্যবস্থার কতকগুলি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় । যা নিম্নে দেওয়া হলো-
১। ব্যক্তিমালিকানা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগঃ এক্ষেত্রে পুজিঁবাদে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত দায়দায়িত্বের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
২। পণ্য অর্থনীতিঃ পুজিঁবাদে এর অর্থ হচ্ছে শিল্প উৎপাদনমূলক সংগঠন থেকে যে সমস্ত পণ্য উৎপাদিত হবে সেসব বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের উপর নির্ভরশীল।
৩। অবাধ প্রতিযোগিতাঃ আধুনিক পুজিঁবাদে অবাধ প্রতিযোগিতা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রয়াধীন যেমন অধিকাংশ শিল্পায়িত দেশে শিল্প সংক্রান্ত দ্বন্দ নিরসনে মধ্যস্থতা ক্ষমতা রাষ্ট্রের রয়েছে।
৪। লাভ লোকসানঃ পুজিঁবাদে মুনাফা যেমন আকাশচুম্মী তেমনি লোকসান ও পাতালস্পর্শী হতে পারে।
৫। মূল্য নির্ধারণে কলাকৈশলঃ পুজিঁবাদী ব্যবস্থায় যেকোন পণ্যর মূল্য উৎপাদন ব্যায়ের উপর নির্ভর করে না বরং বাজার চাহিদা ও সরবরাহের উপর নির্ভরশীল।
৬। শ্রম শোষণঃ পুজিঁবাদের অধীনে শ্রমিকরা মজুরি দাসে পরিণত হয়। তারা উৎপাদনের মালিকের কাছে শ্রম বিক্রি করে থাকে।
পরিশেষে বলা যায় যে, পুজিঁবাদী ব্যবস্থার বিকাশের মূলে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র‌্যবাদ প্রতিষ্ঠার স্বপক্ষে সংগঠিত আন্দোলন কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। উপরের আলোচনার আলোকে বলা যায় পুজিঁবাদী ব্যবস্থা কার্ল মার্কসের একটি সুসংগঠিত ব্যবস্থা।

Comments

Popular posts from this blog

জনসংখ্যা সমস্যা কি? উন্নয়ণশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণসমুহ লিখ?

শিল্প বিপ্লব কি? সমাজবিজ্ঞান উদ্ভব ও বিকাশে শিল্প বিপ্লব ও ফরাসি বিপ্লবের ভূমিকা

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ অলোচনা কর?