মানব উন্নয়নসূচক কী?
ভূমিকাঃ- ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ কর্মসূচির উন্নয়ন কর্মসূচি (UNDP) কর্তৃক প্রকাশিত মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে একটি নতুন নির্ঘন্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ নির্ঘন্টি হলো মানব উন্নয়ন সূচক। পাকিস্তানের প্রখ্যাত অর্থনীতিবীদ ড. মাহবুব-উল-হক এর নেতৃত্বে উন্নয়ন অর্থনীতিবিদদের চিন্তার ফসল হলো এ মানব উন্নয়ন সূচক।ড. মাহবুব-উল-হক ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর অর্মত্য সেন মানব উন্নয়নের সূচকের গবেষণা ও বিকাশের ক্ষেত্রে অবদান রাখেন।
মানব উন্নয়ন সূচকের সংজ্ঞায় বল যায় যে, মানব উন্নয়ন হলো মানুষের জন্য উন্নয়ন এবং এ উন্নয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় মানুষেরই দ্বারা। এ সংজ্ঞা হতে মানব উন্নয়ন সংক্রান্ত তিনটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়।
(i) জনগণের উন্নয়ন বলতে জনগণের সক্ষমতা বৃদ্ধি বুঝানো হয়।
(ii) জনগণের উন্নয়ন বলতে জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফলকে সুষমভাবে বন্টন করা বুঝায়।
(iii) জনগণ কর্তৃক ও উন্নয়ন পরিচালিত হবে এবং জনগনের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ প্রদান নিশ্চিতকরণ করতে হবে।
মানব উন্নয়ন সূচক তিনটি মূল নির্ধারক
মানব উন্নয়ন সূচককে মূলত তিনটি দিক বিবেচনা করে গঠন করা হয়। প্রতিটি উপাদান মানবজীবনের একেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশ করে। এগুলো হলো:-
১। গড় আয়ুষ্কালঃ গড় আয়ু পরিমাপ করা হয় শিশু জম্মকালে জিবন প্রত্যাশার (Life expectancy at birth) দ্বারা। প্রত্যাশিত জীবনকাল নিস্নতম ২৫ বছর এবং সর্বোচ্চ ৮৫ বছর ধরে নিয়ে এ সূচক গঠন করা হয়।
২। শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ শিক্ষাগত যোগ্যতা দুটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠন করা হয়। যথা (ক) বয়স্ক শিক্ষার হার ও (খ) প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিবন্ধীকরণ দ্বারা। এ দুটি বিষয় বিবেচনা করে প্রত্যকটি ক্ষেত্রে নিজ নিজ শতাংশ সূচক পরিমাপে ব্যবহার করা হয়। এই সূচক একটি দেশের শিক্ষার সুযোগ ও বিস্তারের মান নির্দেশ করে।
৩। জীবনযাত্রার মানঃ জীবন যাত্রার মান পরিমাপ করা হয় মূলত মাথাপিছু দেশজ উৎপাদনহার দ্বারা । আর প্রকত মাথাপিছু দেশজ উৎপাদন নির্ধারণ করা হয় মুদ্রার ক্রয় ক্ষমতার সমতা দ্বারা। দেশীয় মুদ্রাকে মার্কিন ডলারে রুপান্তর করে প্রকৃত দেশজ মাথাপিছু উৎপাদন সম্পর্কে তুলনামূলক ধারণা পাওয়া যায়। প্রকৃত মাথাপিছু দেশজ উৎপাদনের সর্বিনম্ন মান হলো $100 এবং সর্বোচ্চ মান $40,000
মানব উন্নয়ন সূচকের প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব:
এই সূচক কেবল অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে সীমাবদ্ধ নয়; এটি মানুষের সামগ্রিক ক্ষমতায়নের প্রতিফলন ঘটায়। বস্তুগত জীবনমানের সঙ্গে মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক উন্নয়নকেও গুরুত্ব দেয়। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশ সমূহের জন্য এই সূচক একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হয়ে উঠেছে। কারণ, এই সূচক ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয় – এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র উন্নয়নের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য নির্ধারণ করা সহজ হয়।উপর্যুক্ত আলোচনায় আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, উন্নয়নের নির্ঘন্ট আলোচনার পাঁচটি দৃষ্টিভঙ্গিই অপরিহার্য। এছাড়া বস্তুগত জীবনমান উন্নয়নসূচি মৌলিক চাহিদা নির্দেশক ও মানের উন্নয়ন নির্দেশক হিসেবে কিছু নির্ঘন্ট রয়েছে। তৃতীয় বিশ্ব তথা উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য এই নির্ঘন্টগুলি যথোপযুক্ত প্রয়াস ও ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত হওয়ার বিশেষ সুযোগ রয়েছে।উল্লেখযোগ্য যে, উন্নয়নশীল দেশসমূহের উন্নয়নের প্রধান মাপকাঠি হলো শিক্ষা। বাস্তব কর্মমুখী শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে উন্নয়ন সম্ভব।
আরো পড়ুন-মানব উন্নয়ন কি? মানব উন্নয়নের নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর।

No comments:
Post a Comment