মানব উন্নয়ন কি? মানব উন্নয়নের নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর

📚প্রশ্নঃ মানব উন্নয়ন কি? মানব উন্নয়নের নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর।

(সমাজবিজ্ঞান মাস্টার্স-ফাইনাল)
দারিদ্র এমন একটি প্রত্যয় যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অভিশাপস্বরুপ কাজ করে।এছাড়াও এটি একটি নেতিবাচক অর্থনীতি যা এমন অবস্থার সৃষ্টি করে যে মানুষ তার জীবনধারনের মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। তাই এ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রয়োজন মানব কল্যাণ সাধন। যা আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়াবলির উপর প্রভাব বিস্তার করে দেশকে উন্নয়নের দিকে অগ্রসর করবে।
মানব উন্নয়ন কি? মানব উন্নয়নের নির্ধারকসমূহ আলোচনা কর



মানব কল্যাণঃ সাধারণত মানব কল্যাণ বলতে আমরা সমাজে বসবাসরত প্রত্যেক মানুষের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানকেই বুঝি। সাধারণত মানুষের উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, অর্থনীতি শিক্ষা প্রভৃতির উপর মানব কল্যাণ নিয়োজিত থাকে। এতে মানব জীবন উন্নত হতে পারে। 


প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন তাত্ত্বিকগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মানব উন্নয়নকে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের শিশু মঙ্গলসূচক অনুসারে-“Human wll-being and deprivation can be considered reoresenting different sides of the same coin" ("মানুষের সদিচ্ছা এবং বঞ্চনাকে একই মুদ্রার বিভিন্ন দিকের পুনর্বিন্যাস বলে বিবেচনা করা যেতে পারে")
Alexandrove (1012) said-“ A generic definition of human well-being for the project, namely to understand it as a state that is intrinsically and not just instrumentally valuable for a person or a social group” (প্রকল্পের জন্য মানব কল্যাণের একটি সাধারণ সংজ্ঞা, যেমন এটিকে একটি রাষ্ট্র হিসাবে বোঝা যা অভ্যন্তরীণভাবে এবং শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি বা একটি সামাজিক গোষ্ঠীর জন্য যন্ত্রগতভাবে মূল্যবান নয়")
এক কথায় মানব কল্যাণ হলো সম্প্রদায় ও জনসাধারণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার  এমন এক প্রত্যয় যা সম্প্রদায়ের কল্যাণ হিসেবে পরিচিত। 
মানব উন্নয়নের নির্ধারক সমূহঃ মানব উন্নয়ন কেবল মূলধন বৃদ্ধির ফলশ্রুতি নয় বরং এর লক্ষ কিছু শর্তও বিরাজমান।মানব উন্নয়নের লক্ষ্যে চারটি নির্ধারক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিম্নে সে সকল নির্ধারক সমূহ আলোচনা করা হলো।
১। সাম্যঃ মানব উন্নয়নের প্রধান নির্ধারক হলো সাম্য। বৈষম্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির মাধ্যমে মানুষের মাঝে এ সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সমাজে বসবাসরত প্রত্যেক যোগ্য, দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী যখন তাদের প্রাপ্ত কর্মসংস্থান লাভ করতে সক্ষম হয় এবয় তাদেরকে পুরুষের পাশাপাশি বিবেচনায় রাখা হয় তখনই সাম্য প্রত্যক্ষ করা যায়। এতে মানব উন্নয়নের দ্বার চাকা সফল হতে থাকে যা দেশকে উন্নয়নের প্রান্তে পৌছে দিতে সহায়তা করে। আবার যখন মানুষ শিকাষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার মাধ্যমে তার জীবনের বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয় তখন সামাজিক সাম্য অর্জিত হয়।
২। দীর্ঘস্থায়িত্বঃ মানব উন্নয়ন এমন এক উন্নয়ন প্রত্যয় যার স্থায়িত্বের উপর দেশের উন্নয়ন নির্ভরশীল। আর এ মানব উন্নয়ন এর দীর্ঘস্থায়িত্বতা তখনই অর্জন করা সম্ভব যখন প্রজম্মের ধারারাহিকতা বজায় থাকে ও তা স্থির থাকে। যদি বর্তমান প্রজম্ম উৎপাদন  ও ভোগ প্রক্রিয়ায় এমনভাবে পরিচালিত করে যে, এতে ভবিষ্যৎ প্রজম্মের উৎপাদন ও ভোগ বর্তমানের চেয়ে হ্রাস পায় তবে বুঝতে হবে যে উন্নয়ন দীর্ঘস্থায়িত্বতা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।অর্থাৎ মানব উন্নয়নের দীর্ঘস্থায়িত্ত্বতের মুল কথা হলো আন্তঃপ্রাজম্মিক সমতা রক্ষা করা। ধারণা করা যায় যে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২০% উন্নত দেশগুলোতে বসবাস করে এবং বিশ্বের মোট আয়ের ৪০% মালিক। আবার দেখা যায় যে বিশ্বের ২০% মানুষ শক্তিসম্পদের ৭০% ভোগ করে। এতে উন্নত দেশ অধিক সুবিধা ভোগ করে এবং অনুন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল দেশের মানুষগুলো প্রায়ই বঞ্চিত হয়ে থাকে। এতে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয় ও দীর্ঘস্থায়িত্বের অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। মানব উন্নয়ন ঘটাতে হলে দীর্ঘস্থায়িত্ত্বতা বিরাজমান রাখা একান্ত আবশ্যক।
৩। উৎপাদনশীলতাঃ উৎপাদনের মূল উপাদান হলো মুলধন ও মানব সম্পদ। তাইতো দেশের মানুষ যত কর্মক্ষম হবে (যতই কারিগরি ও প্রশিক্ষণ দ্বারা কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব) ততই জনগণের উৎপাদনশীলতা বাড়বে। এ উৎপাদনশীরতা কলাকৈশল উদ্ভাবন ও প্রয়োগের মাধ্রমে বৃদ্ধি পায়, তখন দ্রব্য ও সেবা ক্রয়ের জন্য তার ভোগ  পছন্দের আওতা ও বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ মানুষ যত কর্মক্ষম হবে তার ক্রয়ক্ষমতা ও তত বাড়বে।
৪। স্বআধিকারঃ মানব উন্নয়নের অন্যতম নির্ধারক হলো প্রত্যেক মানুষের আধিকারকে সমুন্নত রাখা। কেননা অধিকার প্রাপ্তির মাঝে ব্যাঘাত ঘটলে সমাজে দরিদ্র শ্রেণী তাদের পছন্দ বা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়। তাই প্রত্যেক মানুষের ভাষা, ধর্ম, কৃষ্টি, ঐতিহ্য রক্ষার জন্য সবার প্রতি সম্মান প্রদর্শন একান্তভাবে কাম্য। কেননা এর মাধ্রমেই সত্যিকার উন্নয়ন সম্ভব। সাধারণত স্বল্পোন্নত দেশে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় সংখ্যাগরীষ্ঠতার ভিত্ততে সংখ্যালঘিষ্ঠ অংশ নানাভাবে বঞ্চনার স্বীকার হয়ে থাকে। তাই রাষ্ট্রের সকল মানুষের সব ধরনের অধিকার প্রদানের নিশ্চয়তা বিধান চালু করতে হবে তবেই মানব উন্নয়ন সম্ভব।
এছাড়াও নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় যেমন-

  • আইনি সহায়তা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
  • রাষ্ট্র কর্তৃক নায্য দামে জীবন-যাপনের পজন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রাপ্তির ব্যবস্থা।
  • দারিদ্র‌্যর নামে বরাদ্দকৃত বাজেটের নয়-ছয় না করা।
  • অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পিচিয়ে থাকা মানুষের বাড়তি সরকারি সুবিধা প্রদান করা ইত্যাদি।

উপরিউক্ত নির্ধারকসমুহ যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রিত ও বাস্তবায়িত করলে তখনই মানব উন্নয়ন সম্ভব হবে। অধ্যাপক Thirwall মতপ্রকাশ করে বলেন মানব উন্নয়ন এর সবচেয়ে বড় কথা হলো মানবাধিকার সমুন্নত রাখা। মানব অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় সুশাসন একান্ত আবশ্যক।

Comments

Popular posts from this blog

জনসংখ্যা সমস্যা কি? উন্নয়ণশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণসমুহ লিখ?

শিল্প বিপ্লব কি? সমাজবিজ্ঞান উদ্ভব ও বিকাশে শিল্প বিপ্লব ও ফরাসি বিপ্লবের ভূমিকা

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ অলোচনা কর?