নারীর ক্ষমতায়ন কী? নারী ক্ষমতায়নের গুরুত্ব

নারী ক্ষমতায়ন কী? নারী ক্ষমতায়নের গুরুত্ব

ভূমিকাঃ- নারী ও পুরুষ নিয়ে মানবসমাজ গঠিত। সমাজ তথা রাষ্ট্রের অগ্রগতি ও উন্নয়নের সাথে নারী ও পুরুষ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। পৃথিবীর প্রায় সমগ্র মানবগোষ্ঠীর প্রায় অর্থেক নারী তাই একটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র‌্যতা হ্রাসের লক্ষ্যে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার  বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর পুরুষের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন নারী উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য।

নারীর ক্ষমতায়ন কী? নারী ক্ষমতায়নের গুরুত্ব

নারীর ক্ষমতায়নঃ নারীর ক্ষমতায়ন মূলত একটি বহু রৈখিক ধারণা। সাধারণভাবে বলা যায়, নারীর ক্ষমতায়ন হলো নারীর সেই অর্জিত অধিকার যার মাধ্যমে নারী তার পারিপাশ্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেএবং সে সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে পারবে নিজের চারপাশ বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারবে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন নিম্নে তা তুলে ধরা হলো-

নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে জাতিসংঘ বলেন “নারী ক্ষমতায়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে নারী কল্যাণে সমতা এবং সম্পদ আহরণের সমান সুযোগ অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে এবং নারী পুরুষের সমান সুযোগ, সম্পদ আহরোণ, লিঙ্গবৈষম্য চিহ্নিতকরণ ও বিলোপ সাধনের জন্য একজোট হয়।”

সুজান কিন্ডারভেটার বরেন “নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে একটি পারিপার্শ্বিক রাজনৈতিক শক্তি সম্পর্কে উপলব্ধি এবং তার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজে ব্যক্তির অবস্থানকে উন্নত করা যায়।”

নারী উন্নয়ন গবেষক শামীমা পারভিন বলেন “নারী ক্ষমতায়ন হচ্ছে এমন প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে নারী বস্তুগত ও মানবিক সম্পদের উপর অধিকতর নিয়ন্ত্রণ অর্জন করে পিতৃতন্ত্র ও সকল প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের সকল কাঠামো নারীর বিরুদ্ধে জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্যকে চ্যালেঞ্জ করে।”

হল সি মার্গারেট বলেন “ক্ষমতায়ন সমতা লাভের দাবিকে সম্পৃক্ত করে এবং এক্ষেত্রে অন্য কারো ওপর নির্ভরত নয় বরং ব্যক্তিকে তার নিজস্ব দাবি উপস্থাপন করতে হবে।”

নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্ব

১. অর্থনৈতিক উন্নয়ন: যে কোনো সমাজে নারীর শ্রম শক্তি এবং সৃজনশীলতা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।যেমন- নারীরা উদ্যোক্তা, শ্রমিক ও পেশাজীবী হিসেবে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করে তোলে। নারীর কর্মসংস্থান বাড়লে জাতীয় আয়ের হারও বৃদ্ধি পায়।

২. শিক্ষার প্রসার: একজন শিক্ষিত নারী পরিবার ও সমাজকে শিক্ষিত করে তোলে। নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে তারা শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়, যা একটি প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৩.স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা: ক্ষমতায়িত নারী নিজের ও সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হয়, ফলে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু কমে যায়।

৪. পারিবারিক ও সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ: নারীরা যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে, তাহলে পরিবারে ভারসাম্য বজায় থাকে এবং নারী নির্যাতন হ্রাস পায়।

৫. লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ: নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সমাজে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য হ্রাস পায় এবং নারী-পুরুষ সমান মর্যাদায় সমাজে বসবাস করতে পারে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে নারীর ক্ষমতায়ন বলতে বুঝায় এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে  নারী সর্বস্তরে সম্মানের সাথে নাগরিকের মর্যাদা নিয়ে সবকিছুতে অংশগ্রহণ, চর্চা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে এবং পিতৃতন্ত্রসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ মুক্তভাবে তা বাস্তবায়নে পুরুষের সমান সমান ভূমিকা রাখতে পারবে। নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারী তার অধিকার অর্জনের সুযোগ পাবে পুরুষের সাথে তারাও তাল মিলিয়ে সমাজের উন্নয়নমূলক কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত  করতে সক্ষম হবে।

No comments:

Post a Comment