গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার প্রভাব আলোচনা

গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার প্রভাব আলোচনা

ভূমিকাঃ প্রকৃতির এই নিয়ম পরিবর্তনের পিছনে রয়েছে গ্রীণহাউস গ্যাসসমূহের অবদান যা আমাদের সৃষ্টি। সৃষ্টি তখন সুন্দর হয় যখন তা মানুষের কল্যাণে লাগে। গ্রীণহাউস গ্যাস সৃষ্টি করেছে মানুষ তার কল্যাণে। কিন্তু তা অকল্যাণ ও বয়ে এনেছে।

গ্রীণহাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে সমস্যাসমূহঃ গ্রীণহাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে যে সব সমস্যার সৃষ্টি হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিঃ পৃথিবীর মোট ৭৫% ভাগই জলরাশি। এই বিশাল জলরাশির ৯৭% ভাগই সমুদ্র ধারণ করে। ২০ শতকে সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বৃদ্ধির পরিমাণ ছিলো ১-২ সে.মি. প্রতি বছর তা ছিল ১-৩ মি.মি. যদি ক্রমাগত হার গ্রীণহাউস গ্যাস বায়ুমন্ডলে যোগ হতে থাকে তবে এর উচ্চতা ২১০০ সাল নাগাদ ১-৩ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে বরে বিজ্ঞানীরা আশাঙ্খা করেছেন।

২। উপকূলীয় সমুদ্রতট ও দ্বীপ সমুহে পাবনঃ সমুদ্র উপকুলবর্তী প্রায় ৭৫ মিলিয়ন বর্গ কি.মি এলাকার বসবাসভূমি পানিতে তলিয়ে যাবে। এতর সমুদ্র উপকুরে যারা বসবাস করবে তাদের জীবন যাত্রার মান ব্যহত হবে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে মহাসাগরের দ্বীপসমূহের অধিবাসীরা।

৩। উপকূলীয় এলাকার মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধিঃ সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের পানি উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করে। এতে উপকূলীয় এলাকার জমিতে লবণাক্ততার সৃষ্টি হয় যা প্রাকৃতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

৪। বন্যা ও জ্বলোচ্ছ্বাস বৃদ্ধিঃ সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতার কারণে স্বাভাবিকভাবেই যে জোয়ার হবে তাতে জ্বলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হবে। তখন সেটা বন্যার সৃষ্টি করবে। সমুদ্রের চেয়ে নিচু অঞ্চলগুলিতে রীতিমত বন্যা হবে। এক গবেষনায় দেখা যায় ১৮৮০-১৮৯১ সালের সমুদ্র উপকূলবর্তী ঘুর্ণঝড় ও জ্বলোচ্ছ্বাসে লক্ষ লক্ষ প্রাণীর মৃত্যু হয়। মার্কীন যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় বলা হয় সমুদ্রের তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট বাড়লে সমুদ্রে মারাত্মক ধরনের সুপার হারিকেন সৃষ্টি হবে যা ফলে পূর্ব ধ্বংস ক্ষমতার তুলনায় ঝড়গুলো ৫০ গুণ বেশি হবে।

৫। উপকূলীয় ক্ষয়ঃ অব্যহত উচ্চতা বৃদ্ধিতে সমুদ্র ধীরে ধীরে গ্রাস করতে থাকবে উপকুলীয় অঞ্চল।ফলে কমে যাবে দেশের সীমানা। তার চেয়ে ভয়াবহ হলো তখন পৃথিবীর স্থলভাগ কমে যাবে। যদি ২১০০ সাল নাগাদে ১.৫ মিটার বৃদ্ধি পায় তবে সমুদ্রের গড় ১৫০ মিটার ক্ষয়ীভূত হবে।

৬। সমুদ্রের লবণাক্ততা বৃদ্ধিঃ বৃটিশ Royal society দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে সমুদ্র পরিবেশ থেকে CO2 শুষে নিয়ে পানির PH ভ্যালু কমায়। কিন্তু বায়ু মন্ডলের CO2 সমুদ্রের পানির সাথে মিশে যাচ্ছে ফলে সেখানে তৈরী হচ্ছে কার্বনিল এ্যসিড। সমুদ্রের এসিডিটির মাত্রা ২১০০ সালের মধ্যে ০.৪ ইউনিটে নেমে যেতে পারে। এর ফরে সমুদ্রের লবণাক্ততা বেড়ে যাবে। তখন এর প্রথম আঘাত আসছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফাইটো পাংকন, জুপাংটন ইত্যাদি সামুদ্রিক প্রাণীর উপর। তখন এগুলি অধিক মারা যাবে এবং পানির এসিডিটি বৃদ্ধির ফলে ক্যালসিয়াম কার্বনেটের সহজলভ্যতা হ্রাস পাবে। ফলে খোরসযুক্ত প্রাণী বিপন্ন হয়ে যাবে। তাছাড়া সমুদ্রের লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে বড় মাসের খাদ্য সংকট দেখা দিবে। ফলে সামদ্রিক খাদ্য শৃংখল ভেঙে পড়বে যা সকল সামুদ্রিক প্রানীর জন্য হুমকিস্বরুপ।

পরিশেষে বলা যায়, গ্রীণহাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে পৃথিবীর নিম্নভূমি নিমজ্জিত হবে। কারণ তখন সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। যদিও মানুষ গ্রীণহাউস প্রতিক্রিয়া কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছে তবে এটি এক সময় এই মানুষের জন্যই হুমকি। তাই গ্রীণহাউস গ্যাস কমানোর জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করা উচিত।

Comments

Popular posts from this blog

জনসংখ্যা সমস্যা কি? উন্নয়ণশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণসমুহ লিখ?

শিল্প বিপ্লব কি? সমাজবিজ্ঞান উদ্ভব ও বিকাশে শিল্প বিপ্লব ও ফরাসি বিপ্লবের ভূমিকা

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ অলোচনা কর?