নব্য মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা কর।

 প্রশ্নঃ নব্য মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা কর। 

নব্য মার্কসীয় তত্ত্ব মার্কসবাদেরই বিশেষ সম্প্রসারণ। মার্কসবাদী তাত্ত্বিকদের বিপরীতে একডেমিক পরিমন্ডলে নব্য মার্কসবাদী ধারার উম্মেষ ঘটে।

নব্য মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা কর


নব্য মার্কবাদীগণ দেখান যে অনুন্নত দেশগুলোর অবন্নতি ঘটিয়ে উন্নত দেশগুলোর শিল্পায়নের পথ প্রশস্ত করে। নব্য মার্কসবাদীগণ দেখানোর চেষ্টা করেন যে এক অংশের মূল্যে বিশ্বের অন্য অংশের উন্নতি লাভ করে। এতে উদ্বৃত্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে অন্য অংশমুখী ধাবিত হয়। নব্য মার্কসবাদীগণ দেখান যে, যেখানে দারিদ্র্য ছিল সেখানে সংঘটিত হয়েছে উন্নতি, আর যেখানে ছিল ঐশ্বর্য সেখানে ঘটেছে অবনতি। এই ঐতিহাসিক আবিষ্কার থেকে এটাও প্রতিভাত হয় যে, সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনসমূহ কদাচিৎ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পাদিত হয়। সমসাময়িক অনুন্নত দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য ও বৈপবিক পন্থা ব্যতিরেকে কোন শান্তিপূর্ণ বিকল্প নেই।

১। নব্য মার্কসবাদীদের ধারণা অনুযায়ী, দারিদ্র্য নয় বরং পশ্চাত্যের মূলধন স্থানান্তর অনুন্নত দেমের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। এছাড়া অনুন্নত দেমের শিল্পের উপর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রযুক্তির জন্যে নির্ভরশীলতা অনুন্নত দেশকে আরো বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।এভাবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রসারের মাধ্যমে অনুন্নত দেশকে আরো অনুন্নত করছে।

২। নব্য মার্কবাদীরা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অনুন্নয়নের কারণ বরে অভিহিত করেছেন। যে সকল গ্রামের Metropolis এর সাথে যোগাযোগ বেশি সে সকল গ্রাম তত বেশি অনুন্নত।

৩। নব্য মার্কবাদীদের ধারণা অনুযায়ী প্রকৃত স্বাধীনতা না থাকায় অনুন্নত দেশগুলো অনুন্নত। কেননা অনুন্নত দেশগুলো পরোক্ষভাবে উন্নত দেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

৪। নব্য মার্কবাদীদের মতে, যেসব দেশ Metopolis দেশ থেকে যতবেশি সাহায্য পাচ্ছে সেসব দেশগুরো ততবেমি অনুন্নত।

৫। ক্ষুদ্রায়ন খামার এবং বৃহৎ অথচ অনুন্নত কৃষি খাতের উপস্থিতি।

৬। ক্ষুদ্র এবং কিছুটা অনুন্নত শিল্পখাত যা অনেকটা বিদেশি নিয়ন্ত্রণাধীন। এ খাত সংরক্ষিত অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্যে উৎপাদন করে।

৭। বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত অতি প্রয়োজনীয় প্রাথমিক দ্রব্য উৎপাদন ও রপ্তানি করে।

৮। তুলনামূলকভাবে একটি বড় ব্যবসায়ীখাত যা কতিপয় ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণ করে।এরা বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে।এদের উপর দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নির্ভরশীল থাকে। এ মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ীদের সাথে বিদেশি মূলধন এবং পুঁজিপতিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে যাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য অনেক ক্ষেত্রে এরা কমিশন এজেন্ট হিসেবেও কাজ করে।

৯। এসব দেশে যে উদ্বৃত্ত হয় তা প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের জন্যে পাওয়া যায় না। হয় তা পাচার হয়ে যায় নতুবা দেশের অভ্যন্তরে অপচয় হয়।

১০। উদ্বৃত্তের একটি অংশ বণিক, ঋণদাতা , প্রকৃত সম্পত্তির এজেন্ট এবং অপরাপর লোকদের কাছে হস্তান্তর হয় যারা মূলত অনুৎপাদনশীলবা পরগাছা শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত।

১১। দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারা একচেটিয়া বাজার ভোগ করতে আগ্রহী। তারা কোন প্রতিযোগীতায় যেতে চায় না বিধায় সংরক্ষনে বিশ্বাসী।এরা পাশ্চাত্যের উদ্যোক্তাদের মত দক্ষ নয়।তাই তারা হয় উদ্বৃত্ত বিদেশে পাচার করে নইতো বিলাস দ্রব্যভোগের জন্য ব্যয় করে।

১২। বিদেশী কোম্পানিগুলো স্থানীয় মুনাফা থেকে তাদের বিনিয়োগের সিংহভাগ তারা মেটায় । তারা খুব সল্প পুঁজি নিয়েই আসে।তাছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ সাধারণ পুঁজি ঘন হয়ে থাকে ফলে তা কর্মসংস্থানের তেমন অবদান রাখে না। 

পরিশেষে বলা যায় যে, নব্য মার্কবাদীরা অনুন্নয়নের কারণ হিসেবে উন্নত বিশ্বের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শোষণ ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন।

Comments

Popular posts from this blog

জনসংখ্যা সমস্যা কি? উন্নয়ণশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণসমুহ লিখ?

শিল্প বিপ্লব কি? সমাজবিজ্ঞান উদ্ভব ও বিকাশে শিল্প বিপ্লব ও ফরাসি বিপ্লবের ভূমিকা

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ অলোচনা কর?