সিস্টেম তত্ত্ব কী? সিস্টেম তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যসমূহ

সিস্টেম তত্ত্ব বা ব্যবস্থা তত্ত্ব কী?

ভূমিকাঃ- রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন আলোচনায় সিস্টেম তত্ত্ব নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাম্প্রতিককালের সামাজিক বিশ্লেষণে সিস্টেম তত্ত্ব অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে এর উৎপত্তি হলেও কালক্রমে সিস্টেম তত্ত্ব শুধুমাত্র  সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তার আসন স্থায়ী করেছে তাই নয় বরং শিক্ষা কলা ও চারু শিল্পের মত শিল্পের ক্ষেত্রেও তার প্রভাব রয়েছে সুদূরপ্রসারী। ডেভিড স্টন হলেন ব্যবস্থা তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তা।

সিস্টেম তত্ত্ব কী? ব্যবস্থা তত্ত্ব কী?


সিস্টেম তত্ত্বঃ সাধারণভাবে সিস্টেম তত্ত্ব বলতে বোঝায় পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন সহযোগী এককের এমন এক ধরনের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে যাতে ঐ এককগুলির যে কোন একটির পরিবর্তনে অন্য এককগুলোর পরিবর্তন সাধিত হয়। সিস্টেম তত্ত্বের মূল লক্ষ্য কোন ব্যবস্থার সামগ্রিক পর্যালোচনা।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সিস্টেম তত্ত্বকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করা হলো।

Morton Kaplan এর মতে ''সিস্টেম তত্ত্ব পারস্পরিক বন্ধনে আবদ্ধ একরাশি উপাদান, যা তার পরিবেশ থেকে বিছিন্ন এবং অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সব উপাদানের কার্যকারিতার এক নিয়মিত সূত্র লক্ষ্য করা যায়।''

এলমন্ড ও পলওয়েল এর মতে ''সিস্টেম বা ব্যবস্থা তত্ত্ব হচ্ছে বিভিন্ন অংশগুলির পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং ব্যবস্থার সাথে এর পরিবেশের মধ্যে কোন না কোন ধরনের সীমাবদ্ধতা।''

David Eston এর মতে ''রাজনৈতিক ব্যবস্থার উদ্দেশ্য স্থির করা, নিজেকে রুপান্তরিত করার ও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য বিধান তৈরি করার সৃজনমূলক ক্ষমতা সম্পন্ন এক ব্যবস্থা।''

Anatol Rapoport বলেন ''যেটি তার অংশের স্বাধীনতার কারণে একটি ছিদ্র হিসাবে কাজ করে তাকে সিস্টেম বলা হয়।''

James coleman ''একটি সিস্টেম স্থিতিশীল সীমানা এবং সময়ের সাথে সাথে একটি নির্দিষ্ট অধ্যবসায় সহ আদেশকৃত সম্পর্কের একটি সেট বোঝায়।''

সুতরাং, সিস্টেম তত্ত্ব এমন এক ধরনের সামাজিক সামগ্রিক পরিবেশের সমন্বয় যার মধ্যে বিভিন্ন উপাদানসমূহ পারস্পরিক নির্ভরশীলতার উপর ভিত্তি করে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যাবলী সম্পাদন করে।

উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে বিংশ শতাব্দির সবচেয়ে আলোচিত ধারনাগুলোর অন্যতম হলো সিস্টেম তত্ত্ব। সিসটএম তত্ত্ব হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে  রাজনৈতিক ক্ষমতা বন্টন ও প্রয়োগের দ্বারা প্রাবিত জীবনধারণের উপকরণ সমুহের কর্তৃক সম্পন্ন বরাদ্দের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। আর এ তত্ত্বের উদ্দেশ্য হলো সামগ্রিক বা অখন্ডরুপে কোন কিছুর বিশ্লেষণ।


সিস্টেম তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যসমূহ:

১. সমন্বিত কাঠামো: সিস্টেম তত্ত্ব একটি সামগ্রিক কাঠামো, যেখানে বিভিন্ন উপাদান পারস্পরিক সম্পর্ক ও নির্ভরতার ভিত্তিতে কাজ করে।

২. ইনপুট ও আউটপুট ভিত্তিক: সিস্টেম তত্ত্ব সমাজ বা পরিবেশ থেকে পাওয়া ইনপুট (চাহিদা ও সমর্থন) রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আউটপুট (নীতিনির্ধারণ, সিদ্ধান্ত) এ রূপান্তরিত হয়।

৩. ফিডব্যাক পদ্ধতি: সিস্টেম তত্ত্ব জনগণের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে নীতিমালা বা সিদ্ধান্ত পুনঃমূল্যায়ন হয়, যা একটি ফিডব্যাক লুপ তৈরি করে।

৪. পরিবেশ নির্ভরতা: সিস্টেম তত্ত্ব তার চারপাশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। এটি একটি উন্মুক্ত সিস্টেম (Open System)।

৫. স্বয়ংসংস্কার ক্ষমতা: সিস্টেম তত্ত্বে ব্যবস্থাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেকে সংস্কার করার ক্ষমতাসম্পন্ন হিসেবে দেখা হয়।

৬. স্থিতিশীলতা বজায় রাখে: সিস্টেম তত্ত্বে প্রতিটি উপাদান নির্দিষ্ট নিয়মে কাজ করে যা স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

৭. নিয়মিত কার্যক্রম: সিস্টেম তত্ত্বে প্রতিটি উপাদান নিজ নিজ ভূমিকা পালন করে যা একটি ধারাবাহিক ও নিয়মিত পদ্ধতি

৮. উন্নয়ন ও পরিবর্তনের প্রতি সংবেদনশীল: সিস্টেম তত্ত্বে পরিবেশ বা চাহিদার পরিবর্তনে সিস্টেম নিজেকেই অভিযোজিত করতে পারে।

সিস্টেম তত্ত্বের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এটি রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে একটি চলমান, জটিল ও পারস্পরিক নির্ভরশীল প্রক্রিয়া হিসেবে বিশ্লেষণ করে। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি ও সমাজের মধ্যে সম্পর্ক সহজে বোঝা যায়।

No comments:

Post a Comment