মার্টনের ক্রিয়াবাদী তত্ত্বের উদ্দেশ্যগুলো লিখ।
মার্টনের ক্রিয়াবাদী তত্ত্বের উদ্দেশ্যগুলো লিখ।
আধুনিক সমাজতাত্ত্বিক জগতে রবার্ট কে মার্টন একজন অন্যতম ক্রিয়াবাদী তাত্ত্বিক। বস্তুত উনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ উপযোগিতাবাদ বিপ্লবোত্তর ফরাসি চিন্তাবিদদের দ্বারা ক্রমাগত সমালোচিত হচ্ছিল। ফরাসিদের মতে ব্যক্তির অবাধ স্বাধীনতা সম্পুর্ণ হলেও সামাজিক শৃঙ্খলা সম্পর্ণূরুপে বিকশিত হবে না। নগরায়ন, শিল্পায়ন ও বিশৃঙ্খল রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রভৃতি যে অচলাবস্থার জম্ম দেয় তা চিন্তাবিদদের মধ্যে নতুন চিন্তাধারার জম্ম দেয় বা অনুপ্রেরণা যোগায়। আর এ নব চেতনার বিকাশই ক্রিয়াবাদী সমাজবিজ্ঞানী রবার্ট কে মার্টন অত্যান্ত সুন্দর ও দক্ষতার সাথে সামাজিক কাঠামোগত ক্রিয়াতত্ত্ব প্রদান করেন।
মর্টান বর্ণিত ক্রিয়াবাদী তত্ত্বের উদ্দেশ্যঃ রবার্ট কে মর্টানের ক্রিয়াবাদী তত্ত্বের তিনটি উদ্দেশ্য রয়েছে।
যথাঃ ১।ক্রিয়াবাদ এর রক্ষণশীল মতবাদকে খন্ডন করা।
২। Funcitional Analysis প্রত্যয়গত এ তাত্ত্বিক কাঠামো বিস্তৃত করে।
৩। সমাজবিজ্ঞান তত্ত্ব তৈরীর কৈশল আবিষ্কার করে।
এই তিনটি উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে মর্টান তিনটি বৈশিষ্ট্যর কথা বলেন।
যথা- ১।সমাজব্যবস্থার ক্রিয়াগত ঐক্য
২। সামাজিক উপাদান সমূহের ক্রিয়াগত বিশ্বজনীনতা
৩। সমাজব্যবস্থায় ক্রিয়াগত উপাদানসমূহের অপরিহার্যতা
১। সমাজব্যবস্থার ক্রিয়াগত ঐক্যঃ সমাজ ব্যবস্থা টিকে থাকার জন্য ক্রিয়াগত ঐক্যর কথা বলেছেন মার্টন। ঐ সমাজের ক্রিয়াগত ঐক্য কতটুকু আছে তা জানার জন্য তিনি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।তার মতে পুরো সমাজ ব্যবস্থা বা এর কোন অংশের Functional unity এর দিকে না দেখে বরং পৃথক পৃথকভাবে বিভিন্ন অংশের ভিতরে unity বা ঐক্যের মাত্রা এ ধরন প্রত্যয় গবেষণার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করতে হবে। এভাবে বিভিন্ন আংশের ক্রিয়াগত ঐক্যের তারতম্য এবং কি প্রক্রিয়া এ তারতম্যের জন্য দায়ী তাও জানা যাবে।
২। সামাজিক উপাদান সমূহের ক্রিয়াগত বিশ্বজনীনতাঃ মার্টন মনে করেন যে কোন স্বীকৃত সামাজিক বা সাংস্কৃতিক ব্যবস্থায় সমগ্র সমাজের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না।এ নিয়ে তিনি অন্যান্য সমাজবিজ্ঞানীদের সাথে যুক্তিতর্ক করেন। এক্ষেত্রে তিনি ২টি বিষয় উপস্থাপন করেন। যথাঃ-
(ক) উপাদানগুলো সবসময় ইতিবাচক নয় বরং নেতিবাচক ভূমিকাও রাখতে পারে।
(খ) কিছু কিছু উপাদানের ভূমিকা ব্যক্ত হতে পারে আবার কিছু কিছু সুপ্ত হতে পারে।
৩। সমাজব্যবস্থায় ক্রিয়াগত উপাদানসমূহের অপরিহার্যতাঃ মার্টন সমাজব্যবস্থায় ক্রিয়াগত উপাদানের অপরিহার্যতার কথা বলতে গিয়ে দুটি বিষয় তুলে ধরেছেন। যেমন-
(ক) সত্যিই কি সমাজব্যবস্তায় ক্রিয়াগত অপরিহার্যতা রয়েছে যার পরিপূরক দরকার?
(খ) সত্যিই কি কিছু ক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য অপরিহার্যরুপে কিছু কাঠামো বিদ্যমান?
প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলেন- কিছু পূর্ব শর্তের প্রয়োজন আছে তবে তা বাস্তব অভিঙ্গতার আলোকে সমাজব্যবস্থার নিরিক্ষে উপলব্ধি করতে হবে।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলেন- শুধুমাত্র এক ধরনের কাঠামোই ক্রিয়াগত পূর্বশর্ত পূরণ করতে পারে না।তার জন্য বিকল্প কাঠামো দরকার যা একই প্রয়োজন বিকল্পভাবে একইভাবে মিটাতে পারে। এ ধারণা থেকেই Functional Alternative এর আবিষ্কার করেন।
সর্বশেষ বলা যায় মার্টন এর সকল তত্ত্বের মধ্য ক্রিয়াবাদ তত্ত্ব অন্যতম । যদিও এর অনেক সমালোচনা রয়েছে তবে এর ভালো দিকও রয়েছে। যা যথার্থ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমাজবিজ্ঞানের ক্রমবিকাশে তাৎপর্যপূর্ণ কাজে লাগানো যেতে পারে।
Comments
Post a Comment