বিবর্তন কি? হার্বার্ট স্পেন্সারের সামাজিক বিবর্তন তত্ত্ব
বিবর্তন কি? হার্বার্ট স্পেন্সারের সামাজিক বিবর্তন তত্ত্ব
বিবর্তন বা অভিব্যক্তি হলো এমন একটি জীববৈজ্ঞানিক ধারণা যা প্রজম্ম থেকে প্রজম্মান্তরে জীবের গাঠনিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যর ক্রমপরিবরতনকে বোঝায়। তখন এ বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত হয় যে, মানুষ বিশেষ ধারায় বিবর্তনের মাধ্যমে এই বর্তমানে এসে পৌছেছে।
H. Spencer তাঁর প্রখ্যাত ‘Social Statics’ গ্রন্থে সামাজিক বিবর্তনের উপর নতুন দর্শন প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন বিবর্তন হচ্ছে সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা একটি নির্দিষ্ট নিয়মে সম্পাদিত হয় । বিবর্তন হলো একটি আকস্মিক ভাঙনের ঘটনা যা সমাজ সৃষ্টি করে।
H. Spencer (হার্বার্ট স্পেন্সার) মনে করেন ‘‘বিবর্তন সর্বদা অগ্রগামী ও সর্বজনীন’’। তিনি আরও বলেন ‘‘ There is an evolution from incoherent homogeniety to incoherent heterologeneity’’ এভাবে সমাজ সমরুপ আবস্থা হতে বিবর্তনের মাধ্যমে অগ্রগামী হয় এবং বিভিন্নরুপে বিস্তৃত হয়। তিনি তার এ ধারণা নিয়েছেন জীববিজ্ঞান থেকে । জীব যেমন এককোষী দেহ হতে বহুকোষি দেহে বিকশিত হয় তেমনি তার সমাজ পরিবর্তনের ব্যাখ্যাটিও।
স্পেন্সার সমাজ পরিবর্তন ব্যাখ্যাটিতে যে সূত্র প্রদান করেছেন তাহলো ‘‘A transformation from inorganic to organic and from organic to super organic.’’ তিনি মনে করেন সমাজের এ পরিবর্তন চক্রাকার ও অগ্রগামী এবং বিবর্তন হচ্ছে উন্নয়ন যা দ্রুত বিস্তার ঘটায় যেখানে সমাজ অত্যান্ত সাধারণ অবস্থা হতে বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে জটিল ও সংঘটিত অবস্থায় রুপান্তরিত হয়।
হার্বার্ট স্পেন্সারের সামাজিক বিবর্তন তত্ত্ব বিশ্লেষণঃ H. Spencer এর মতে বিবর্তনের ধারা সমগ্র বিশ্বচরাচর জ্যোতিমন্ডল ও ভূত্বকের অভ্যন্তরেও ক্রিয়াশীল। উল্লেখ্য H. Spencer এর সামাজিক বিবর্তনবাদ প্রধানত অতি জৈবিক (super organic) ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়েছে। হার্বার্ট স্পেন্সার সুপার অর্গানিক লাইফ সম্পর্কে যা বুঝিয়েছেন তা মূলত সমাজ নির্ভর এবং সামাজিক ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। স্পেন্সার বস্তুত এ সমাজকেন্দ্রিক আলোচনায় অধিক আগ্রহী ছিলেন।তাই বিশ্বজনীন বিবর্তন ধারাকে প্রবিষ্ট করেছেন সমাজ বিবর্তনের গতিরেখা অন্বেষণের মাধ্যমে। H. Spencer এর মতে বিবর্তন প্রক্রিয়ার সমাজ বিকাশের ক্ষেত্রে তার নির্দিষ্ট কতকগুলো ধাপ রয়েছে । যেমন-
হার্বার্ট স্পেন্সার এর মতে “উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সামাজিক বিবর্তন সূত্র পরিপূর্ণ হয় এবং একটি সরল সমাজকে পরিধির বিস্তার, সংঘবদ্ধতা এবং বহুরুপিতার উপাদানে বিভূষিত করে বিবর্তনের জটিলতম রুপের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যেমন-
ক. সাদৃশ্যতার বিলুপ্তিঃ আদিম সমাজে মৌলিক একক পরিবারের মধ্য সীমাবদ্ধ ছিলো বহুবিদ ও বিচিত্রমুখী কার্যাবলি । কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পরিবারের সীমিত গন্ডী ভেঙে প্রতিষ্ঠানগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং একটি মাত্র সত্তা পরিবারের অন্তভূক্ত হয়।
খ. উপাদান সমূহের জ্যামিতিকহারে পরিবৃদ্ধিঃ সমাজ বিকাশের ক্ষেত্রে দেখা যায় সমাজ বিকাশের সাথে সাথে সমাজস্থ উপাদানসমূহের বিস্তৃতি ও ঘটে জ্যামিতিক হারে।
গ. বিচ্ছিন্ন উপাদানসমূহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য অর্জন প্রবণতাঃ এক্ষেত্রে মূল সামাজিক সংগঠনের উপাদানরুপে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনা করা যেতে পারে এছাড়া পারিবারিক এককের পরিবর্তে যে প্রতিষ্ঠান সমূহের উদ্ভব ঘটে সে গুলোও বিবেচ্য হতে পারে। উভয় ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনসমুহের কর্মপদ্ধতি ও কার্যধারা সম্পূর্ণ ভিন্নমুখী। যেমন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্য প্রণালীগত ও পদ্ধতিগত ভিন্নতা রয়েছে।
ঘ. অন্তর্গত শৃঙ্খলা ও ভারসাম্য অবস্থাঃ সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্য নিজস্ব স্বকীয়তা বিদ্যমান থাকলেও তাদের মধ্যে রয়েছে পারস্পারিক নির্ভরশীলতা যা সুষম ভারসাম্য বজায় রাখে।
হার্বার্ট স্পেন্সার বর্ণিত এ যে বিবর্তন প্রক্রিয়া এখানে তিনটি বৈশিষ্ট্য লক্ষনীয়। যথা- (ক) একত্রীকরণ (integration) (খ) পৃথকীকরণ (differentioation) (গ) নিয়মানুগত্য (determination)। এ তিনটি বৈশিষ্ট্যর উপস্থিতি সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠে স্পেন্সার প্রদত্ত সমাজ অগ্রসরতার আলোচনায়। প্রথমে একত্রীকরণ গড়ে উঠে সরল সমাজে ‘পরিবার’ নামক একককে কেন্দ্র করে। কেননা জনগণের বৃদ্ধি ও সংযোগের ক্ষেত্রে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানাদির একত্রিত রুপটিও ছিল পরিবারের গন্ডিতেই। অতঃপ জটিল সমাজ ও যৌথ সমাজে এসে পৃথকীকরণ ঘটে আকৃতিগত, বিমূর্ত সম্পর্কগত এবং প্রক্রিয়াগত সবক্ষেত্রে যা পরবর্তীতে নিয়মানুগত্যকে অবলম্বন করে সামাজিক যোযোগ ব্যবস্থার বৈচিত্র ঘটিয়ে জাতিকে পরিণত করে। কেননা স্পেন্সারের মতে ‘Evolution is a change from a state of relatively indefininite, incoherent, homogencity to a state of relatively, define, coherent heterogeneity.’ এ যে সমসত্ত্বতা (homogencity) থেকে অসমত্ত্বাতায় (heterogeneity) উত্তরণ তা পরিস্ফুটিত হয়ে উঠেছে যোদ্ধা সমাজ হতে শিল্প সমাজের উত্তরণের ক্ষেত্রে।
Comments
Post a Comment