একজন আদর্শ নেতার গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্য
একজন আদর্শ নেতার গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্য
👉👍মানুষ সমাজে বসবাস করে তার নিজের চাহিদা পূরণ করার জন্য। আর প্রতিতটি সমাজে একজন করে সুদক্ষ নেতার প্রয়োজন পড়ে। নেতা ছাড়া কোন সংগঠ বা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। সমাজ ও সংগঠনের অগ্রগতির একটি বিশেষ অঙ্গ হলো নেতৃত্ব। কারণ যোগ্য নেতৃত্ব সমাজ পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
সমাজ তথা একটি আদর্শ রাষ্ট্রে সব ধরনের কর্ম সম্পাদনের জন্য একজন আদর্শ নেতার কোন বিকল্প নেই। কারণ প্রতিটি দেশই কোন না কোন একজন আদর্শ নেতার নির্দেশে পরিচালিত হয়। মানব সমাজের পরিবর্তন শুধু নেতার কারণেই হয়। কারণ নেতা যদি ভালো হয় তবে গোটা সমাজ ও দেশের উন্নয়ন হয় আর নেতা যদি না ভালো হয় তবে সে সমাজ বা দেশে অরাজকতা ও বিশৃঙাখলা দেখা দেয় যাতে করে জনজীবন হয়ে উঠে দূর্বিসহ। মানুষ সবসময় চায় একজন ভালো আদর্শ নেতার সংস্পর্শে থাকতে। কারণ একজন আদর্শ নেতার কাজ হলো জনগণের ভালো পরামর্শ প্রদান করা এবং তাদের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করা। তবে এ আদর্শ নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার মধ্যে কিছু গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন।
একজন আদর্শ নেতার গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্যঃ একজন আদর্শ নেতার বেশ কিছু গুণাবলি থাকে। একজন আদর্শ নেতার গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্য দ্বারা সে জনগণের কাঝে বা সমাজের কাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। নিম্নে একজন আদর্শ নেতার কি কি গুলাবলি বা বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন তা নিয়ে আলোচনা করা হলো-
১। সত্যবাদিতাঃ একজন আদর্শ নেতার প্রথম ও প্রধান গুণ হলো সত্যবাদিতা। কারণ সত্যবাদিতার মাধ্যমে একজন মানুষের নীতি নৈতিকতা প্রকাশ পায়। মানুষ যখন নেতা হয় তখন সে জনগণের মদ্যে নানা ধরনের ভ্রান্তি ছড়ায় যেমন আমার দল যদি জয় লাভ করে তবে দেশের বা সমাজের জন্য আমি এটা করব বা এই এই কাজগুলি করব এমন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। কিন্তু দেখা যায় যে তার দল বা সে ক্ষমতা লাভের পর তার দেওয়া সে প্রতিশ্রুতি আর রাখেনা । এখানে সে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নেতা হয়। তবে এখানে যদি একজন সত্যবাদী নেতা হতো তবে এ প্রতিশ্রুতি গুলি রক্ষা করত তাই সত্যবাদিতা অবশ্যই একজন আদর্শ নেতার গুনাবলি বা বৈশিষ্ট্যর অন্যতম লক্ষণ। তাই আদর্শ নেতার মধ্যে সত্যবাদিতা থাকতে হবে।
২। দূরদর্শিতাঃ একজন আদর্শ নেতা সবসময় জনকল্যাণে কাজ করবে। কারণ সে ভাবে যে এই কাজ করলে ব্যক্তি জীবন ও সমাজজীবনের উন্নয়ন হবে। এখানে একজন আদর্শ নেতা সব সময় বিশ্লেষণ করবে কিভাবে রাষ্ট্রের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা যায়, কিভাবে মানুষের দারিদ্র্যতা ও দুঃখ কমানো যায়। এমন দূরদর্শিতা গুণাবলি একজন আদর্শ নেতার মাঝে থাকতে হবে। তাছাড়া সবসময় রাষ্ট্র নিপীড়ন বাধ্য রাখার জন্য জনগণের উদ্দেশ্য বিভিন্ন ধরনের নিয়ামাবলি প্রয়োগ করবে যাতে শান্তি বজায় থাকে। তাই একজন আদর্শ নেতার গুণাবলির মধ্যে অবশ্যই দূরদর্শিতা জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
৩।দেশপ্রেম ও সুসম্পর্কের উন্নয়নঃ একজন আদর্শ নেতার মধ্যে দেশপ্রেম থাকতে হবে তবেই সে দেশের মানুষের কল্যাণ চাইবে । প্রকৃতপক্ষে যারা দেশপ্রেমিক তারাই নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম। কারণ একজন দেশপ্রেমিক সবসময় সে তার দেশকে ভালোবাসে দেশের স্বার্থে যে কোন কাজ করতে প্রস্তুত থাকে। দেশপ্রেমিক মানুষ সবসময় দেশের মানুষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে। কারণ দেশের মধ্য যদি কোন মারামারি হানাহানি হয় তাহলে দেশের আর্থসামাজিক অনেক ক্ষতি হয়। তাই একজন আদর্শ নেতার মধ্যে দেশপ্রেম ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার গুনাবলী থাকা প্রয়োজন।
৪। বুদ্ধিমত্তাঃ একজন আদর্শ নেতার অবশ্যই ভালো ও তীক্ষ বুদ্ধিমাত্রা থাকা প্রয়োজন। কারণ আজকে যে সব উন্নত দেশ আছে সেদিকে লক্ষ করলে দেখা যায় তাদের উন্নতির মূলে রয়েছে তাদের বুদ্ধি মত্তা। আর ইংরেজিতে একটি কথা আছে Knowledge is Power. তাই অবশ্যই একজন আদর্শ নেতার দেশ পরিচালনার স্বার্থে অত্যান্ত বুদ্ধি বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তিত্বের গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে।
৫। প্রতিনিধিত্বের জ্ঞান দক্ষতাঃ একজন নেতা একটি দেশের যাবতীয় কাজকর্ম সম্পাদনের শিক্ষক হিসেবে কাজ করে। জনহণ সবসময় তার নিকট পরামর্শ চায়। কারণ সে একজন আদর্শ নেতা। একজন আদর্শ নেতা সব সময় প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা রাখে। কারণ একজন দেশের যে নেতৃত্ব দিবে তাকে অবশ্যই প্রতিনিধিত্বের জ্ঞান বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ হতে হবে।
৬। শক্তি সমার্থ্যঃ একজন আদর্শ নেতার অবশ্যই শক্তি সামর্থ্য থাকতে হবে। কারণ শক্তি সামর্থ্য না থাকলে কখনও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা সম্ভব হয় না। একারণে একজন আদর্শ নেতার গুণাবরি বা বৈশিষ্টে শক্তি সামর্থ্য থাকা প্রয়োজন।
৭।দায়িত্ববোধঃ একজন আদর্শ নেতার গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্যর মধ্যে অন্যতম দিক হলো দায়িত্ববোধ। একজন আদর্শ নেতার অবশ্যই দায়িত্ববোধ থাকতে হবে।কারণ দায়িত্ববোধ ছাড়া কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা সম্ভব নয়। আর একজন আদর্শ নেতার কাজ হলো তার দায়িত্ব কর্তব্য গুলো সঠিকভাবে পালন করা। দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষ কখনই একজন আদর্শ নেতা হতে পারে না। মানব সমাজ নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমানে পৌছেছে অনেক বাধা অতিক্রম করে। এ সমাজের মধ্যে কিছু আদর্শ নেতার কারণেই দ্রুত পরিবর্তন হয়েছে। তাই আদর্শ নেতা হতে হলে অবশ্যই তার গুণাবলীতে দায়িত্ববোধ থাকা আবশ্যক।
৮। জনকল্যাণঃ একজন আদর্শ নেতার সবচেয়ে বড়গুণ হলো জনকল্যাণ নিশ্চিত করা। কারণ জনকলাণের মাধ্যমেই একজন নেতাকে আদর্শ নেতা বলা হয়। মানব সমাজে কল্যাণমূলক কাজ হলো সবচেয়ে বড় ও মহৎ কাজ। আর তাই একজন আদর্শ নেতা হতে হলে আগে ভাবতে হবে কোনটি রাষ্ট্রে মানুষের জন্য বেশি দরকার। কোনটি বেশি উপকারী কোনটি ক্ষতিকর তা যাচাই করতে হবে।তাই একজন আদর্শ নেতার গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্যতে জনকল্যাণমূলক কাজের জ্ঞান ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন।
৯। শান্তি শৃঙ্খলা নিশ্চিত করাঃ একজন আদর্শ নেতা হতে হলে তাকে অবশ্র শান্তি শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ রাষ্ট্রের মধ্যে যদি অরাজকতা বিরাজ করে তবে রাষ্ট্রে আর্থ-সমাজিক কাঠামো অনেক দূর্বল হয়ে যায়। কারণ শান্তি শৃঙ্খলা হলো রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো উন্নয়নের হাতিয়ার। তাই একজন আদর্শ নেতাকে অবশ্যই রাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষমতা থাকতে হবে।
১০। শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ একজন আদর্শ নেতার অবশ্য শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। কারণ শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতা নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নেতা যদি অশিক্ষিত হয় তবে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। আর নেতা যদি শিক্ষিত হয় তবে অনেক বেশি উন্নয়ন সম্ভব। তাই একজন আদর্শ নেতার গুণাবলির মধ্য শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা আবশ্যক।
১১। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাঃ একজন আদর্শ নেতার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা থাকতে হবে তা না হলে আবেগের বশে যে কোন সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভূল হতে পারে যা দেশ ও সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এজন্য আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
১২। নীতিবান ও ধর্য্যশীলতাঃ একজন আদর্শ নেতা হতে হলে অবশ্য তার মধ্যে ধর্য্যশীলতা থাকতে হবে । কথায় অোছে সবুরে মেওয়া ফলে। যেকোন কঠিন কাজে ধর্য্য ধারণ করার ক্ষমতা থাকতে হবে পাশাপাশি সৎ ও নীতিবান হতে হবে। তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রে উন্নয়ন ঘটবে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, একজন আদর্শ নেতার নানাবিধ গুণাগুণ থাকা প্রয়োজন। কারণ একজন আদর্শ নেতা একটি রাষ্ট্রের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে সর্বদা নিয়োজিত থাকে। তবে নেতা অবশ্য জনমতের ভিত্তিতে গড়ে উঠে। কারণ নেতা যদি স্বৈরাতন্ত্রের ভিত্তিতে গড়ে উঠে তবে রাষ্ট্রের জন্য হুমকি স্বরুপ। তাই একজন আদর্শ নেতা হতে হলে অব্যশ্যই তার মধ্যে প্রয়োজনীয় গুণাগুণ থাকা অবশ্যক।
Comments
Post a Comment