কাম্য জনসংখ্যা কি? কাম্য জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য লেখ
একটি দেশ বা রাষ্ট্র গঠনের জন্য যে কয়টি উপাদানের প্রয়োজন তার মধ্য কাম্য জনসংখ্যা অন্যতম উপাদান। কারণ জনসংখ্যা ছাড়া কোন রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না আবার অধিক জনসংখ্যা একটি দেশের উন্নতির অন্তরায়। কাম্য জনসংখ্যা বলতে বুঝায় সম্পদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা হ্রাস।
কাম্য জনসংখ্যাঃ কাম্য জনসংখ্যা বলতে কাঙ্ক্ষিত জনসংখ্যাকে বোঝায়। যে জনসংখ্যা কোনো দেশের সম্পদ ও সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের নিশ্চয়তা দিতে পারে তাই কাম্য জনসংখ্যা যা মূলত একটি জনশক্তি বা জনসম্পদ। যখন কোনো একটি দেশে যে পরিমাণ জনসংখ্যা থাকলে দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান সর্বোচ্চ হয় তখন তাকে সেই দেশের কাম্য জনসংখ্যা বলে।
অধ্যাপক হিকস এর মতে, ''কাম্য জনসংখ্যা হলো এমন এক জনসংখ্যার স্তর যে স্তরে জনসংখ্যার মাথাপিছু উৎপাদন সর্বোচ্চ হয়।''
অধ্যাপক রবিন্স বলেন-"কাম্য জনসংখ্যা হলো এমন এক জনসংখ্যার স্তর যেখানে সর্বোচ্চ উৎপন্ন ও প্রতিদান সৃষ্টি হয়।''
অধ্যাপক ডাল্টন এর মতে ''এ হচ্ছে তাই যা মাধাপিছু আয়কে সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত করে।''
কে. ই. বল্ডিং এর সংজ্ঞানুযায়ী ''কাম্য জনসংখ্যা হলো সেই পরিমাণ জনসংখ্যা যার দ্বারা জীবনযাত্রার মান সর্বোচ্চ হয়ে থাকে।''
পরিশেষে বলা যায়, জনসংখ্যা যেমন একটি দেশের জন্য অপরীহার্য তেমনি অতিরিক্ত জনসংখ্যা একটি দেশের কাঙ্খিত উন্নতির পথে অন্তরায়। তাই সম্পদের আলোকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হ্রাসই হলো কাম্য জনসংখ্যা।
কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যঃ নিম্নে কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো-
১। আকাঙ্ক্ষিত জনসংখ্যাঃ কাম্য জনসংখ্যা হলো মূলত আঙ্ক্ষিত জনসংখ্যা। দেশের সম্পদ ও সুযোগের আলোকে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও হ্রাসকরণউ হলো কাম্য জনসংখ্যা। দেশের সম্পদের যোগ্য ব্যবহারের মাধ্যমে কাঙ্খিত উন্নতি লাভ করাই হলো কাম্য জনসংখ্যার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
২। জনসম্পদঃ কাম্য জনসংখ্যার অন্য একটি বৈশিষ্ট্য হলো জনসম্পদ যা একটি দেশের বোঝা না হয়ে সম্পদে রুপান্তরিত হবে।জনসংখ্যার পরিমাণ ও তাদের সুষম সম্পদ বন্টনের মাধ্যমেই মূলত দেশ তার কাঙ্খিত সাফল্যের দিকে এগিয়ে যায়।
৩। মাথাপিছু আয়ঃ কাম্য জনসংখ্যার আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো জনগণের মাথাপিছু আয় সর্বাধিক থাকবে। অর্থাৎ দেশের উন্নয়নের জন্য জনসংখ্যার পরিমাণ এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ বা সম্প্রসারণ করতে হবে যাতে জনগণের মাথাপিছু আয় সর্বাধিক হয়।
৪। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাঃ কাম্য জনসংখ্যার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো জনসংখ্যার পূর্ণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। অর্থাৎ জনসংখ্যার পরিমাণ সীমাবদ্ধ বা সম্প্রসারণ করতে হবে দেশের কর্মসংস্থানের উপর নির্ভর করে।
৫। সম্পদ ও সুযোগের সদ্ব্যবহারঃ কাম্য জনসংখ্যার ক্ষেত্রে দেশের সম্পদ ও সুযোগে মধ্যে একটা সমতা রক্ষা করা হয়। অর্থাৎ দেশের যে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে তার আলোকে জনসংখ্যা নির্ধারণ করা কারণ সম্পদ অপেক্ষা জনসংখ্যা বেশি হলে সেখানে সাম্প্রতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, জনসংখ্যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মতবাদের মধ্যে কাম্য জনসংখ্যা মতবাদ বিশেষ প্রসিদ্ধ।