পুঁজির ধরন আলোচনা কর
ভূমিকাঃ- জেমস স্যামুয়েল কোলম্যান ছিলেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিক একজন আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী, তাত্ত্বিক এবং প্রয়োগিক গবেষক। আমেরিকান সমাজবিজ্ঞান সমিতি এর একজন সভাপতি ছিলেন। কোলম্যান শিক্ষা সমাজবিজ্ঞান এবং জননীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন। সামাজিক পুঁজি প্রত্যয়টি ব্যবহারকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন জেমস কোলম্যান। তাঁর রচিত দুইটি গ্রন্থ The Adolescent Society (1961), এবং Coleman report (Equality of educational oppertunity, 1966) এ শিক্ষা, সমাজতত্ত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচ্য।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় শিক্ষা নীতির পূনর্বিন্যাস, উৎপাদনমুখিতা এবং সমতার অনুঘটক নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোলম্যানের ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ।
কোলম্যানের সামাজিক পুঁজি
সামাজিক পুঁজি প্রত্যয়টি ব্যবহারকারীদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন প্রখ্যাত আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী জেমস স্যামুয়েল কোলম্যান। তিনি তাঁর Fundations of social Theory গ্রন্থে সামাজিক পুঁজি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন অসংখ্য সম্পদ পারিবারিক সম্পর্ক এবং সম্প্রদায়ের সামাজিক সংগঠনের মধ্যে পাওয়া যায়। তিনি বিশ্বাস করেন শিশুর জ্ঞানগত এবং সামাজিক বিকাশের জন্য সামাজিক পুঁজি অপরিহার্য।
কোলম্যানের সামাজিক পুজির ধরণ
'সামাজিক পুঁজি' বা Social Capital এর ধারণাটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কোলম্যান পুঁজিকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যথা- (১) মানবীয় পুঁজি (২) দৈহিক বা শারীরিক পুঁজি (৩) সামাজিক পুঁজি।
১। মানবীয় পুঁজিঃ
মানবীয় পুঁজি হচ্ছে একজন ব্যক্তির দক্ষতা, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা যা সমাজে তাদের মূল্য নির্ধারণ করে।
২। দৈহিক বা শারীরিক পুঁজিঃ
কোলম্যান বর্ণিত তিন প্রকার পুঁজির মধ্যে দ্বিতীয়টি হলো দৈহিক বা শারীরিক পুঁজি। দৈহিকপুঁজি হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে বাস্তব এবং সাধারণত একটি ব্যক্তিগত দ্রব্যদি যা যন্ত্রের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরও সহজতর করে তোলে।
৩। সামাজিক পুঁজিঃ
সুনির্দিষ্ট কিছু দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি সামাজিক মর্যাদা অর্জন করে এবং এর মাধ্যমেই তা সামাজিক পুঁজিতে রুপান্তরিত হয়। তদুপরি সামাজিক পুঁজির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের তিনটি ধরণ সৃষ্টি করে সমাজের পুঁজির বিনিময়েরপ্রধান তিনটি দিক। অর্থাৎ সামাজিক ও মানবীয় পুঁজি পরস্পরের পরিপূরক। যদিও সামাজিক পুঁজির যথেষ্ট ব্যবহারিক মূল্য রয়েছে তবে এটি সহজে বিনিময়যোগ্য নয়। এ অবস্থা বিশ্লেষণে কোলম্যান আপেক্ষিক পুঁজির ধারণা উদ্ভাবন করেন।তিনি মনে করেন যে ব্যক্তির মূল্য অনুসন্ধান প্রকৃতপক্ষে সামাজিক পরিবেশ এবং ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। ফলে মানবীয় পুঁজি এবং দৈহিক পুঁজি এই ঘটনার কারনে যথারীতি পরিবর্তিত হবে। কোলম্যান ধারনা করেন যে মানবীয় এবং দৈহিক পুঁজিতে বিনিয়োগের চেয়ে সামাজিক পুঁজিতে বিনিয়োগ অপেক্ষাকৃত সহজ। দৈহিক পুঁজিতে বিনিয়োগ অর্থনৈতিক এবং আর্থিক উভয়ক্ষেত্রে সাধারণ একটি ভালো সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে মানবীয় পুঁজিতে বিনিয়োগ যে কাউকে অধিক অভিজ্ঞ করে তোলে যা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক। যখন কোন সামাজিক পুঁজি বিনিয়োগের জন্য উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করে তখন তা সবসময় ব্যক্তিগতভাবে মর্মস্পর্শী নয়।
অর্থাৎ ব্যক্তিবর্গ যখন সামজিক পুঁজিতে বিনিয়োগ করে তখন আর নিজেদের জন্য বিনিয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে না। সামাজিক পুঁজিতে বিনিয়োগ সামাজিক কাঠামোতে বিনিয়োগের পথকে প্রশস্ত করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে সামাজিক পুঁজি সম্পর্কিত জেমস কোলম্যানের ধারণা সমাজবিজ্ঞানে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করে।

No comments:
Post a Comment